মোদীর সেনা-দরদ নিয়ে ফের প্রশ্ন রাহুলের

প্রকাশিত: ৮:২১ অপরাহ্ণ, অক্টোবর ৩০, ২০১৬

মোদীর সেনা-দরদ নিয়ে ফের প্রশ্ন রাহুলের

নিউ সিলেট ডেস্ক:::   দীপাবলির শুভেচ্ছা নাকি পত্রবাণ! কিছু দিন আগে তিনি প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে তোপ দেগেছিলেন, ‘‘সেনারা দেশের জন্য রক্ত ঝরাচ্ছেন। আর আপনি আড়ালে থেকে দালালি করছেন!’’ আর এ বার রাহুল গাঁধীর প্রশ্ন, সেনা জওয়ানদের প্রতি নরেন্দ্র মোদীর ভালবাসা আদৌ কতটা খাঁটি!
প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি লিখে আজ দীপাবলির শুভেচ্ছা জানিয়েছেন কংগ্রেস সহসভাপতি। কিন্তু সেই শুভেচ্ছার চিঠিতেই তিনি অভিযোগ তুলেছেন, মোদী সরকার বেতন-ভাতার নিরিখে সরকারি আমলা ও সেনা অফিসারদের মধ্যে বৈষম্য তৈরি করায় সেনার মনোবল ধাক্কা খাচ্ছে।
গত দু’বছর সিয়াচেন ও পঞ্জাব-সীমান্তে সেনা জওয়ানদের সঙ্গে দীপাবলি উদযাপন করেছিলেন মোদী। এ বছর দীপাবলি উপলক্ষ্যে কাল তিনি কাটাবেন চিন-সীমান্তে আইটিবিপি (ইন্দো-টিবেটান বর্ডার পুলিশ)-র জওয়ানদের সঙ্গে। তার ঠিক আগেই মোদীর সেনা-প্রেম নিয়ে প্রশ্ন তুললেন রাহুল। পাশাপাশি বেতন বৈষম্য নিয়ে সামরিক বাহিনী থেকে যে সব দাবি উঠছিল, সেগুলিকে সমর্থন করে তাঁদের পাশে টানারও চেষ্টা করেছেন কংগ্রেস সহসভাপতি। প্রধানমন্ত্রীকে লেখা চিঠিতে রাহুলের দাবি, এক পদ এক পেনশনের নীতি ঠিক ভাবে রূপায়ণ করা হোক। l বেতন ও অন্যান্য বিষয়ে সেনা অফিসারদের অভাব-অভিযোগ দূর করা হোক। রাহুলের মতে, মোদী সরকার এ পর্যন্ত সেনাদের জন্য যে সব সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তাতে আশ্বস্ত হওয়া তো দূর, বর্তমান ও প্রাক্তন ফৌজিরা তাতে আহত বোধ করছেন।
সীমান্তে মোতায়েন জওয়ানদের মনোবল বাড়াতে দেশবাসীর প্রতি প্রধানমন্ত্রীর আর্জি, সেনাবাহিনীর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে তাঁদের শুভেচ্ছা বার্তা পাঠান। অমিত শাহ আবার শহিদ জওয়ানদের স্মৃতিতে দীপাবলিতে প্রদীপ জ্বালানোর আবেদন জানিয়েছেন। রাহুলের প্রশ্ন, সেনাকে ঘিরে শাসক শিবিরের এই তৎপরতা আদৌ কতটা আন্তরিক। মোদী কি সত্যিই সেনা জওয়ানদের জন্য চিন্তিত, নাকি এই সবই স্রেফ দেখনদারি, চিঠিতে কার্যত সেই প্রশ্নই তুলেছেন রাহুল। তিনি লিখছেন, ‘‘আমাদের সকলের জন্য যাঁরা নিজেদের প্রাণ দিচ্ছেন, দায়িত্বশীল গণতন্ত্র হিসেবে আমাদের দায়িত্ব, তাঁরা যেন সত্যিই ১২৫ কোটি মানুষের ভালবাসা, সমর্থন ও কৃতজ্ঞতা বুঝতে পারে।’’
রাহুলের দাবি, শুধু মুখে নয়, কাজেও সেনাবাহিনীর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানানোর বার্তা দিক মোদী সরকার। তাঁর যুক্তি, ‘সার্জিক্যাল স্ট্রাইক’-এর কয়েক দিন পরেই, পঙ্গুদের জন্য পেনশন ব্যবস্থা বদল করা হয়েছে। তাতে কর্মরত অবস্থায় পঙ্গু হলে জওয়ানদের প্রাপ্য পেনশন বহু ক্ষেত্রেই অনেকটা কমে গিয়েছে। সপ্তম বেতন কমিশন সুপারিশ কার্যকর করার পরেও বেতন বৈষম্য রয়ে গিয়েছে সরকারি আমলা ও সেনা অফিসারদের মধ্যে। রাহুলের দাবি, পঙ্গুত্বের ক্ষেত্রে পেনশন, ক্ষতিপূরণ বা সরকারি অফিসারদের সঙ্গে বেতনের সামঞ্জস্য— এই সব ক্ষেত্রে নিজেদের ন্যায্য পাওনা পেতে জওয়ানদের যেন যুদ্ধ করতে না হয়।
কিন্তু দীপাবলির শুভেচ্ছায় কেন এই ভাবে অভিযোগের কাঁটা জু়ড়ে দিলেন রাহুল? দলের অন্দরে নেতারা বলছেন, ‘দালালি’ নিয়ে রাহুলের মন্তব্যে হিতে বিপরীত হয়েছিল। কংগ্রেস সহসভাপতি যখন ওই মন্তব্য করেন, তখন তিনি উত্তরপ্রদেশে কিষাণ যাত্রায় ব্যস্ত। সেই যাত্রা ম্লান করে দিয়ে বিজেপি-সঙ্ঘ ও সরকার একযোগে সেনার বীরত্বের জয়গান গেয়ে দেশপ্রেম ও জাতীয়তাবাদ উস্কে দিতে শুরু করে। যার অন্যতম লক্ষ্য অবশ্যই উত্তরপ্রদেশের ভোটে ফায়দা তোলা। শাসক শিবিরের সকলেই তখন ‘সার্জিক্যাল স্ট্রাইক-এর’ কৃতিত্ব মোদীকে দিতে ব্যস্ত। আর মোদী বোঝাচ্ছেন, কতটাই সেনাদরদি তিনি। এমন একটা সময়ে রাহুলের ওই ‘দালালি’ মন্তব্যে বিতর্কের ঝড় ওঠে। বিজেপির প্রবল আক্রমণের মুখে পড়তে হয় তাঁকে। অনেক সেনা-জওয়ানের পরিবারও নিন্দা করেন এর। কংগ্রেসের অনেক নেতাও এ নিয়ে অস্বস্তিতে পড়েছিলেন। রীতা বহুগুণা জোশী কংগ্রেস ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দেওয়ার সময়েও রাহুলের ওই মন্তব্যের সমালোচনা করেছিলেন। কিছুটা ব্যাকফুটেই চলে যায় কংগ্রেস।
সেই ক্ষতি মেরামতে রাহুলকে কিছু একটা করতেই হত। দীপাবলির শুভেচ্ছাপত্রে মোদীকে বিঁধে সেই কাজটিই করলেন তিনি। ফের প্রশ্ন তুললেন মোদীর সেনা-দরদ নিয়ে। সেনার দাবিকে সমর্থন করে তাদেরও আস্থা পাওয়ার চেষ্টা চালালেন।সুত্র আনন্দবাজার



This post has been seen 392 times.

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

সর্বশেষ শিরোনাম

অনুসন্ধান ক্যালেন্ডার

শনি রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র
 
১০
১১১২১৩১৪১৫১৬১৭
১৮১৯২০২১২২২৩২৪
২৫২৬২৭২৮২৯৩০৩১