”দীপন হত্যাকাণ্ডের এক বছর” মামলার কোনো অগ্রগতি নেই

প্রকাশিত: ১১:১৮ পূর্বাহ্ণ, অক্টোবর ৩১, ২০১৬

”দীপন হত্যাকাণ্ডের এক বছর” মামলার কোনো অগ্রগতি নেই

নিউ সিলেট ডেস্ক::::    প্রকাশক ফয়সাল আরেফিন দীপন হত্যাকাণ্ডের এক বছর পেরিয়ে গেছে। গত বছরের এই দিনে শাহবাগের আজিজ সুপার মার্কেটে নিজের প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান জাগৃতি প্রকাশনীর কার্যালয়ে খুন হন তিনি। কিন্তু এত দিনে দুই ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করা ছাড়া তেমন কোনো অগ্রগতি নেই দীপন হত্যা মামলার । আবার এই দুই ব্যক্তির প্রকৃত নাম-ঠিকানাও এখনো জোগাড় করতে পারেনি পুলিশ।
একই দিন একই সময়ে লালমাটিয়ায় হামলার শিকার হন শুদ্ধস্বর প্রকাশনীর কর্ণধার আহমেদ রশিদ টুটুল ও তার এক বন্ধু। হামলায় গুরুতর আহত হন তারা।
দীপন হত্যার ঘটনায় আটক দুই ব্যক্তির জবানবন্দি থেকে পুলিশ বলছে, ড. অভিজিৎ রায়ের ‘বিশ্বাসের ভাইরাস’ বইটি প্রকাশ করায় দীপনকে গলা কেটে হত্যা করে আনসারুল্লাহ বাংলাটিম। একই কারণে হামলার শিকার হন শুদ্ধস্বরের টুটুল।
এর আগে ওই বছরের ফেব্রুয়ারিতে বাংলা একাডেমির একুশে বইমেলা থেকে ফেরার পথে মার্কিন প্রবাসী অভিজিৎ রায়ও খুন হন জঙ্গিদের হাতে। এ সময় তার স্ত্রী রাফিদা আহমেদ বন্যা আহত হন।
দীপন হত্যা মামলায় এখন পর্যন্ত অগ্রগতি বলতে দুজনকে গ্রেপ্তার করে মামলার তদন্তকারী সংস্থা ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। তাদের ধরিয়ে দিতে এর আগে পুরস্কার ঘোষণা করেছিল পুলিশ। গ্রেপ্তার দুজন এখন ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে রয়েছেন।
পুলিশ বলছে, ওই দুজন ছদ্মনাম ব্যবহার করছে বলে তাদের প্রকৃত পরিচয় নিয়ে নিঃসন্দেহ নয় তদন্ত সংস্থা। আর সব আসামি গ্রেপ্তার না হওয়া পর্যন্ত অভিযোগপত্র (চার্জশিট) দিতে পারছে না তারা।
গত বছরের ৩১ অক্টোবর শাহবাগের আজিজ সুপার মার্কেটের দ্বিতীয় তলার জাগৃতি প্রকাশনীর কার্যালয় থেকে ফয়সাল আরেফিন দীপনের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এ ঘটনায় তার স্ত্রী ডা. রাজিয়া সুলতানা জলি বাদী হয়ে অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তিদের আসামি করে শাহবাগ থানায় একটি হত্যা মামলা করেন। পরে মামলাটি অধিকতর তদন্তের জন্য দায়িত্ব দেওয়া হয় ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশকে (ডিবি)।
এরপর এ বছরের ২৩ আগস্ট দীপন হত্যাকাণ্ডে জড়িত আনসারুল্লাহ বাংলাটিমের মইনুল হাসান শামীম নামের এক সদস্যকে গ্রেপ্তার করে ঢাকা মহানগর পুলিশের বিশেষ শাখা কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ইউনিট। তাকে ধরিয়ে দিতে এর আগে পুলিশ দুই লাখ টাকা পুরস্কার ঘোষণা করেছিল। জিজ্ঞাসাবাদে দীপনকে হত্যার কথা স্বীকার করে জবানবন্দিতে শামীম জানান, অভিজিৎ রায়ের বই প্রকাশের কারণে দীপনকে খুন করা হয়।
পুলিশ বলছে, মইনুল হাসান শামীমের সাংগঠনিক নাম শামীম ওরফে সমির ওরফে ইমরান। তার গ্রামের বাড়ি সুনামগঞ্জের ছাতক উপজেলার মাধবপুর গ্রামে। দীপনকে খুনের ঘটনায় তিনি ছাড়া আরও পাঁচজন অংশ নেন। হত্যাকা-টি পরিচালনার দায়িত্ব ছিল তার। তিনি আনসার আল ইসলামের সামরিক শাখার শীর্ষ চার মাসুলের (দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তি) একজন।
মইনুল হাসান শামীম এর আগে ২০১০ সালে নিষিদ্ধ সংগঠন হিযবুত তাহরীরের প্রচারপত্র বিতরণের সময় ছাতক থানার পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হন। সে সময় তার বিরুদ্ধে সন্ত্রাস দমন আইনে একটি মামলা হয়। ওই মামলায় পুলিশ তার বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দেয়। একপর্যায়ে শামীম সুনামগঞ্জের সংশ্লিষ্ট আদালত থেকে অস্থায়ী জামিনে মুক্তি পান। পরে উচ্চ আদালত মামলা নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত তাকে স্থায়ী জামিন দেন।
গত ৫ সেপ্টেম্বর দীপন হত্যা ও টুটুল হত্যাচেষ্টার ‘অন্যতম হোতা’ আনসারুল্লাহ বাংলাটিমের (এবিটি) সদস্য আবদুস সবুরকে গ্রেপ্তার করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। গোয়েন্দা পুলিশের একটি দল টঙ্গী রেলস্টেশন থেকে সবুরকে গ্রেপ্তার করে। ২৩ বছর বয়সী সবুর ভিন্ন নামে রাজু ওরফে সাদ ওরফে সামাদ নামেও পরিচিত। এবিটির সামরিক শাখার শীর্ষ চারজনের একজন। তার নামেও পুলিশের পুরস্কারের অঙ্ক ছিল দুই লাখ টাকা। সবুর কুমিল্লার নাঙ্গলকোট থানার ঢালুয়া ইউনিয়নের ইদ্রিস পাটোয়ারির ছেলে।
সবুরকে উদ্ধৃত করে গোয়েন্দা পুলিশ জানায়, সে আনসারুল্লাহ বাংলাটিমের সদস্যদের সামরিক প্রশিক্ষণ দেওয়ার পাশাপাশি দীপন ও টুটুলের ওপর হামলার ছক তৈরি, ঘটনাস্থল রেকি করাসহ ওই ঘটনার সার্বিক দায়িত্বশীলদের একজন ছিল।
দীপন হত্যা মামলার তদন্ত সম্পর্কে জানতে চাইলে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পরিদর্শক ফজলুর রহমান বলেন, ‘দুজন আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তবে তারা ছদ্মনাম ব্যবহার করেছে। তাদের প্রকৃত নাম-ঠিকানা জোগাড় ও আরো আসামি গ্রেপ্তার করতে না পারলে আদালতে অভিযোগপত্র (চার্জশিট) দেওয়া যাচ্ছে না।’
ফজলুর রহমান আরো বলেন, ‘আমরা মোটামুটিভাবে নিশ্চিত যে অভিজিৎ রায়ের ‘বিশ্বাসের ভাইরাস’ বইটি প্রকাশ করায় দীপনকে হত্যা করেছে আনসারুল্লাহ বাংলাটিম।’
তদন্তের সম্পর্কে জানতে চাইলে চাইলে ফয়সাল আরেফিন দীপনের স্ত্রী ডা. রাজিয়া সুলতানা জলি জানান, তারা গণমাধ্যমে যা পান তার চেয়ে বেশি কিছু জানেন না।
ডা. রাজিয়া বলেন, ‘দীপনের মৃত্যুর পর আমাদের মধ্যে দীপনের যে শূন্যতা সৃষ্টি হয়েছে, তা পূরণ হওয়ার নয়। তবে আমি চেষ্টা করছি তার পরিবার ও সন্তানদের সান্ত¦না দেওয়ার। আর মামলার তদন্ত সম্পর্কে মিডিয়া যে তথ্য জানে, আমিও তা-ই জেনেছি। ফলে এ বিষয়ে আলাদা কোনো তথ্য আমার কাছে নেই।’
দীপনের মৃত্যুর এক বছর উপলক্ষে সোমবার বিকেলে টিএসসি চত্বরে একটি স্ম^রণ সভার আয়োজন করা হয়েছে বলে জানান ডা. রাজিয়া।



This post has been seen 350 times.

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

সর্বশেষ শিরোনাম

অনুসন্ধান ক্যালেন্ডার

শনি রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র
 
১০
১১১২১৩১৪১৫১৬১৭
১৮১৯২০২১২২২৩২৪
২৫২৬২৭২৮২৯৩০৩১