অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনে হিলারির মনোযোগ চায় বিএনপি : শওকত মাহমুদ

প্রকাশিত: ১২:২৭ অপরাহ্ণ, অক্টোবর ৩১, ২০১৬

অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনে হিলারির মনোযোগ চায় বিএনপি : শওকত মাহমুদ

নিউ সিলেট ডেস্ক:::   বাংলাদেশের চেনা জানা মানুষ হিসেবে আর বিশ্বজুড়ে গণতান্ত্রিক ক্ষমতা পালাবদলের অগ্রদূত হিসেবে পরিচিতি হিলারির জয় কামনা করছে বিএনপি। বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান সাংবাদিক নেতা শওকত মাহমুদ বেগম খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের পক্ষ থেকে এই বার্তা পৌঁছে দিয়েছেন হিলারির ৬৯তম জন্মদিনে।
এই প্রতিবেদকের সঙ্গে একান্ত সাক্ষাতকারে শওকত মাহমুদ জানান, প্রেসিডেন্ট হিলারির কাছে আলাদা কোনো চাওয়া নেই, শুধু বাংলাদেশে অবাধ এবং সুষ্ঠু নির্বাচনের পথ তৈরি করতে জনগণের চাওয়াকে তিনি সমর্থন দেবেন এটাই প্রত্যাশা। তবে শুধু বিএনপি নয়, আ্ওয়ামী লীগসহ সকল দল হিলারির প্রতি সমর্থন রাখেন বলেও জানান তিনি।
হিলারি ক্লিনটন, এবছর পা দিলেন ৬৯ বছরে। ডেমোক্রেট দলের প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হিসেবে লড়ছেন ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিরুদ্ধে। যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসের প্রথম নারী প্রেসিডেন্ট হিসেবে ইতিহাস গড়ার প্রায় দ্বারপ্রান্তে। সপ্তাহ খানেক বাদে নভেম্বরের ৮ তারিখে প্রেসিডেন্সিয়াল নির্বাচনের আগের জন্মদিনটি তাই হিলারি পালন করেন বেশ অনাড়ম্বর আর নির্বাচনী অর্থ সংগ্রহের জন্য সম্ভাব্য ফান্ডরাইজের উপলক্ষ হিসেবে। বাংলাদেশে ১০ বছর ধরে ক্ষমতার বাইরে থাকা অন্যতম প্রধান দল বিএনপি চেয়ারপারসনের ঘনিষ্ট, সাংবাদিক নেতা এবং ভাইস চেয়ারম্যান শওকত মাহমুদ হিলারির এই জন্মদিনের পার্টিতে গিয়েছিলেন তাকে বেগম জিয়া আর তারেক রহমানের শুভেচ্ছা পৌঁছে দিতে।
‘হিলারি ক্লিনটনের সঙ্গে আমার ব্যক্তিগত পরিচয় ছিল, আর দলগত যোগাযোগ তো নানাভাবে আছেই। তার ৬৯ তম জন্মদিনের অনুষ্ঠান যেটি নিউইয়র্কে হয়েছে সেখানে বিশ্বের আর যুক্তরাষ্ট্রের নানা শীর্ষ ব্যক্তিত্বের যোগ দেওয়ার সুযোগ হয়েছিল। আমিও আমন্ত্রিত হয়েছিলাম সেখানে যোগ দেবার জন্য। যদিও এই অনুষ্ঠানে যোগদানকারীদের সবাইকে ন্যূনতম ১০ হাজার ডলার নির্বাচনী অনুদান দিতে হয়েছে’— বলছিলেন জনাব শওকত মাহমুদ।
শওকত মাহমুদ জানান, তার সঙ্গে প্রায় মিনিট তিনেক কথা হয়েছে হিলারি ক্লিনটনের। সেই সময় টুকুতে তিনি বাংলাদেশের খবর জানতে চেয়েছিলেন। সেখানে তিনি হিলারিকে জানিয়েছেন যে অভিবাসী সম্প্রদায় হিসেবে এখানকার বাংলাদেশিরা হিলারির পক্ষেই শক্তভাবে কাজ করছে। জবাবে হিলারি বেশ উচ্ছ্বসিতভাবে জানিয়েছেন, তিনি জানেন যে এখানকার বাংলাদেশি সম্প্রদায় হিলারির পক্ষেই নির্বাচনী কাজ আর প্রচারণা চালাচ্ছে।
‘তবে সেই অল্প সময়ে আমি তার কাছ থেকে সাংবাদিকসুলভ কোনো বার্তা বের করে আনতে চেষ্টা করিনি, আমি শুধু আমার মেসেজটি দিয়েছি যে, বেগম খালেদা জিয়া আর তারেক রহমানের পক্ষ থেকে তিনি এখানে এসেছেন তার জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানাতে এবং দীর্ঘায়ু কামনা করতে।’— হিলারি কোনো বার্তা দিয়েছেন কিনা এমন প্রশ্নের উত্তরে বলেন শওকত মাহমুদ।
বাংলাদেশে সরকারের নির্যাতন আর দমন পীড়নে মাঠের রাজনীতিতে প্রায় খোড়া হয়ে বসে থাকা বিএনপি কি হিলারি প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হলে বিশেষ কিছু আশা করছে তার কাছ থেকে? এমন প্রশ্নের জবাবে শওকত মাহমুদ বলেন, ‘দেখুন তার কাছে আমাদের বিশেষ কিছু চাওয়ার নেই, চাওয়াটা আমাদের নিজেদের যে, আমরা একটা শান্তিপূর্ণ আর সুষ্ঠু নির্বাচন চাই বাংলাদেশে। বাংলাদেশের বর্তমান সরকার সব গণতান্ত্রিক পথ রুদ্ধ করে দিয়ে শান্তিপূর্ণ ক্ষমতা হস্তান্তরের সকল দরজা বন্ধ করে রেখেছে এবং সেখানে কোনোভাবেই সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয় বলে একটি ধারনা প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টা করছে। হিলারি ক্লিনটন তার দেশে বিভেদ নয়, ঐক্যের রাজনীতির প্রচারক, তিনি গণতান্ত্রিক ঐহিত্য সমুন্নত রাখার পক্ষে লড়াকু যোদ্ধা। এ নিয়ে তিনি তার প্রতিদ্বন্দ্বী ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে যুদ্ধ করছেন। বাংলাদেশে বিভেদের রাজনীতি চলছে এবং সেটা রক্ত ঝরাচ্ছে, রাজনৈতিক হানাহানির সৃষ্টি করছে। এ অবস্থা থেকে মুক্তি দিতে পারে সকল দলের অংশগ্রহণে একটি শান্তিপূর্ণ গ্রহণযোগ্য নির্বাচন। সেই নির্বাচনের দাবি আমাদের। এজন্য ঐক্য আর গণতন্ত্র রক্ষার নেতা হিসেবে হিলারির যে লড়াই, সেই লড়াইয়ের ন্যায্যতা দেওয়ার জন্যেই তো তিনি আমাদের গণতান্ত্রিক আন্দোলনে সহায়তা দেবেন, সেটা আমরা কামনা করতেই পারি।’— বলছিলেন জনাব শওকত মাহমুদ।
এ প্রসঙ্গে শওকত মাহমুদ আরো বলেন, হিলারি নির্বাচিত হলে প্রেসিডেন্ট ওবামার পররাষ্ট্রনীতিকেই এগিয়ে নেবেন। সেখানে বাংলাদেশ নিয়ে তিনি ব্যক্তিগতভাবে বেশি জানেন। আর যুক্তরাষ্ট্রের নিজস্ব অভ্যন্তরীন স্বার্থ আর ভূ-রাজনৈতিক স্বার্থের কারণেই শেখ হাসিনা সরকারের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র কাজ করছে।
মেজর জিয়াউর রহমানের হাত দিয়ে গড়া দল বিএনপির সঙ্গে ঐতিহাসিকভাবে যুক্তরাষ্ট্রের রিপাবলিকান দলের সম্পর্ক ভালো ছিল। আর আ্ওয়ামী লীগের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক বরাবরই ডেমোক্রেট দলের। এবারে বিএনপি সবটুকু বাজি কি হিলারির পক্ষেই ধরছে, নাকি ডোনাল্ড ট্রাম্প নির্বাচিত হলে তার দল রিপাবলিকান পার্টির সঙ্গেও পূরোনো সম্পর্ক জাগিয়ে তোলার সুযোগ রেখেছে বিএনপি? এমন প্রশ্নের জবাবে শওকত মাহমুদ বলেন, সেই সুযোগ অবশ্যই আছে বিএনপির।
‘আগে তো রিপাবলিকান দলের সঙ্গেই যোগাযোগ বেশি ছিল, তবে এখন মনে হয় বিশ্ব রাজনীতি বদলাচ্ছে, এখন আর কোনো নির্দিষ্ট দল তার পররাষ্ট্রনীতিকে অন্য নির্দিষ্ট দলের সঙ্গেই সম্পর্ক রেখে চালাবে এমন ধারণা আর চর্চা নেই। যেটা ভারত করছে সেটা ভুল, তাদের কংগ্রেস সরকার মনে করত বাংলাদেশে তাদের ভালো মেলে, আ্ওয়ামী লীগ সরকারের সঙ্গেই। কিন্ত নরেন্দ্র মোদির বিজেপি সেই নীতির পরিবর্তন করেনি। তারা বাংলাদেশের জনগণের সঙ্গে না থেকে একটি নির্দিষ্ট দলকেই তাদের বন্ধু মনে করে প্রকারান্তরে তারা ভুল করছে। কেননা, বাংলাদেশের জনগণ এখন ভারতকে অতীতের চেয়ে বেশি শত্রুভাবাপন্ন মনোভাব নিয়ে দেখে। শুধু বাংলাদেশতো নয়, নেপাল, ভুটান শ্রীলঙ্কাতেও তারা জনগণের চেয়ে দলকে প্রাধান্য দিয়ে সরকার চালাচ্ছে। এটা এখন আর আর্ন্তজাতিক বিশ্বে স্বীকৃত পররাষ্ট্রনীতি নয়। তো আমরা আশা করব কোনো দল নয়, জনগণের সঙ্গেই থাকবে যুক্তরাষ্ট্রের পরবর্তী প্রেসিডেন্ট।’ – বলেন শওকত মাহমুদ।
শওকত মাহমুদ জানান, তিনি নির্বাচনের শেষ পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করবেন। এই নির্বাচনে সকল অভিবাসী সম্প্রদায়ের চাওয়ার সঙ্গে তারাও দলগতভাবে চান, বাংলাদেশকে চেনা জানা প্রার্থী হিলারি ক্লিনটনই বসুন হোয়াইট হাউসে। সেই চাওয়াটা বর্তমানে সরকারী দল আওয়ামী লীগও চায় বলেই মনে করেন তিনি।



This post has been seen 325 times.

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

সর্বশেষ শিরোনাম

অনুসন্ধান ক্যালেন্ডার

শনি রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র
 
১০
১১১২১৩১৪১৫১৬১৭
১৮১৯২০২১২২২৩২৪
২৫২৬২৭২৮২৯৩০৩১