ওয়াটার বাস নিয়ে লুকোচুরি যাত্রী হয়রানির শেষ নেই

প্রকাশিত: ১২:৩৫ অপরাহ্ণ, নভেম্বর ২, ২০১৬

নিউ সিলেট ডেস্ক:::::     ঢাকার চারপাশের নদীগুলোকে দখলমুক্ত করে জনগণকে ওয়াটার বাসের মাধ্যমে জলপথে চলাচল সুযোগ করে দিতে সরকারের প্রচেষ্টা এখন মৃত্যুর মুখে। তবে আর্থিকভাবে লাভবান না হলেও জনস্বার্থে এই সার্ভিসটি চালু রাখতে চায় সরকার।
সরকারিভাবে এই সার্ভিস পরিচালনায় বিভিন্ন সমস্যা হওয়ায় সম্প্রতি চার্টারের মাধ্যমে এটি পরিচালনার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। এতে জনগণের ভোগান্তি না কমে বরং তা আরো বেড়েছে বলে অভিযোগ করেন এই পথে চলাচল করা যাত্রীরা।
রোববার সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, এই সার্ভিসটি ঢাকার সদরঘাট থেকে আশুলিয়া ল্যান্ডিং স্টেশন পর্যন্ত চলার কথা থাকলেও তা এখনো চালু হয়নি। এটি চলাচল করছে বাদামতলী থেকে গাবতলী পর্যন্ত। যদিও টিকিটে সদরঘাট, বাদামতলী, সোয়ারীঘাট টু গাবতলী লেখা, ভাড়াও সেই ৪০ টাকাই। যদিও গত কোরবানির ঈদের পর থেকে প্রায় দেড় মাস বন্ধ ছিল এই সেবা।
রোববার সকালে আশুলিয়া ল্যান্ডিং স্টেশনে এ বিষয়ে কথা হয় গেজ অপারেটর মো. আরিফের সঙ্গে। তিনি  বলেন, এই স্টেশন থেকে এখনো ওয়াটার বাস সার্ভিস চালু হয়নি। ড্রেজিঙের কাজ চলছে। যতোদূর জানি ড্রেজিঙের কাজ শেষ হলে এখান থেকে এই সার্ভিস চালু হবে।
কথা হয় তার পরের স্টেশন সিন্নিরটেক (পুরাতন দিয়াবাড়ি টার্মিনাল)ল্যান্ডিং স্টেশনের লস্কর মো. মতিউর রহমানের সঙ্গে। তিনি বলেন, মন্ত্রী উদ্বোধন করার পর চলতি মাসের ৮ থেকে ১২ তারিখ পর্যন্ত এখানে কয়েকটি বাস এসেছিল তারপর আর আসেনি। আবার কবে আসবে জানি না। তবে শুনেছি পানি কম হওয়ায় এখানে ওয়াটার বাস আসতে পারছে না। তাই ড্রেজিঙের কাজ হচ্ছে। কাজ শেষ হলে আবার চলাচল শুরু হবে।
তবে সেখানে থাকা নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন স্থানীয় বাসিন্দা জানান, পানি কম থাকার অজুহাত সঠিক নয়। কারণ এখান দিয়ে মালবাহী যেসব ট্রলার যায় সেগুলো পানির নিচে ১০ ফুট গভীর পর্যন্ত থাকে। আর এই বাস পানির নিচে থাকে মাত্র ছয় ফুটের মতো। তাহলে মালবাহী ট্রলার যেতে পারলে এগুলো আসতে পারবে না কেন?
সিন্নিরটেক থেকে গাবতলী ওয়াটার বাস স্টেশনে গিয়ে কথা হয় স্থানীয় কয়েকজনের সঙ্গে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, গত কোরবানির ঈদের পর থেকে এই সার্ভিস বন্ধ রয়েছে। আগে সরকারিভাবে যখন চলতো তখনই ভালো ছিল। তখন হয়তো সময়মতো আসতো না, কিন্ত এখনতো বাসই আসে না।
স্থানীয়রা অভিযোগ করেন, এখানে যাত্রীদের হয়রানি ছাড়া আর কিছুই নেই। কারণ ওয়াটার বাস আসলে কখন ছাড়বে তার কোনো ঠিক ঠিকানা থাকে না। এমন ঘটনাও ঘটেছে যে ২০ থেকে ৩০ জন যাত্রী থাকলেও তাদের নামিয়ে দেওয়া হয়েছে। কারণ পুরোপুরি না ভরলে তারা বাস ছাড়ে না।
এ বিষয়ে মঙ্গলবার দুপুরে ফোনে কথা হয় টিকেট কাউন্টারের দায়িত্বে থাকা আলমগীরের সঙ্গে। তিনি বলেন, ঈদের পর থেকে সার্ভিস বন্ধ ছিল। আজকে থেকে আবার চলাচল শুরু হয়েছে। আমাদের বাদামতলী থেকে গাবতলী আসতে ঘণ্টা দুয়েক লাগবে। পরে দুপুর আড়াইটার দিকে গাবতলী স্টেশনে ওয়াটার বাস আসে।
আলমগীর আরও জানান, বাতামতলী থেকে একবার গাবতলী আসতে সব মিলিয়ে ২ হাজার টাকার মতো খরচ হয়। কিন্ত সেই পরিমাণ যাত্রী আমরা পাই না।
আলমগীরের কথা সঠিক নয় দাবি করে ফরিদ নামের এক যাত্রী বলেন, এখানে যাত্রী ঠিকই হয়। তারা কেন সার্ভিস চালু রাখেন না এটা তারাই ভালো জানে। তিনি বলেন, এখান থেকে পাঁচ মিনিট পরপর বাস ছাড়ে। কোনো বাস খালি যায় না। আর ওয়াটার বাস চালু থাকলে যাত্রী হবে না এটা ভুল কথা।
ফরিদের বক্তব্যকে সমর্থন করেন অন্য যাত্রীরাও। তারা জানান, অনেকদিন বিরতি দিয়ে এটা চালু হওয়ার পরও কিন্ত যাত্রী কম নয়। যাত্রীর ঘাটতি না থাকার এটাই প্রমাণ। যাত্রীদের কাছে নদীর পানিতে দুর্গন্ধ সম্পর্কে জানতে চাইলে তারা বলেন, এখন নদীতে পানি বেশি, স্রোত আছে, তাই গন্ধ নেই। পানি কমে গেলে কিছুটা গন্ধ আসে। তবে সরকার যদি নদীতে বর্জ্য ফেলতে না দেয় তাহলে এই গন্ধটা থাকবে না।
বাদামতলী ঘাটে পৌঁছে কথা হয় মেসার্স ইমরান ট্রেডার্সের কর্ণধার মো. আলী আশরাফের সঙ্গে। যার দায়িত্বে এখন এই লাইনের নয়টি ওয়াটার বাস রয়েছে।
গত কোরবানির ঈদের পর থেকে সার্ভিস বন্ধ থাকার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমার অধীনে যেগুলো রয়েছে তার কোনোটি ৪৫ সিটের আবার কোনোটি ৮২ সিটের। এগুলোতে জ্বালানি খরচ অনেক বেশি। ছোট যে গাড়িটা সেটায় একবার যাওয়া-আসায় শুধু ডিজেল লাগে ৩ হাজার ৩০০ টাকার। আর বড়টায় খরচ আরো বেশি সেগুলোতে একবার যাওয়া- আসায় তেল লাগে ৮৭ লিটার যার দাম আসে ৫ হাজার ৬৫৫ টাকা। আর ফুল সিট বুক হলে লাগে ৬ হাজার ৫৬০ টাকা।’
ওয়াটার বাসের জ্বালানি খরচ সম্পর্কে তিনি আরো বলেন, ‘আমি যখন নেই তখন ভেবেছিলাম বড় বাসে ৪২ লিটারে একবার যাওয়া-আসা যাবে; কিন্ত এখন দেখি ৮৭ লিটার ডিজেল লাগছে। সরকারকে প্রস্তাব দিয়েছে ইঞ্জিন চেঞ্জ করার। সেটা করলে এগুলোর গতি বাড়বে এবং জ্বালানিও কম লাগবে।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওয়াটার বাসের কয়েকজন চালক বলেন, এই বাস সার্ভিস চালানোর শর্তে আশরাফ সাহেবকে রকেট ঘাট দেওয়া হয়েছে। তিনি রকেট ঘাট ঠিকমতো চালাচ্ছেন। কারণ ওটাতে লাভ হয়।
তারা আরো জানান, এই সার্ভিস চালাতে যেই টাকা লোকসান হয়, তার থেকে তিনি যদি এটা না চালান তবে কম লোকসান হয়। আর এটাতে যেহেতু লাভ হয় না তাই তিনি এমন করছেন।
এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্পোরেশনের (বিআইডব্লিউটিসি) জনসংযোগ কর্মকর্তা মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম মিশা বলেন, ঢাকার চারপাশের নদী দখলমুক্ত ও নদীর পানি দূষণ মুক্ত করার পাশাপাশি জনগণের যাতায়াতের ব্যবস্থা করার জন্য সার্ভিসটি সরকার চালু করেছে। সরকার যাদের যোগ্য মনে করেছে তাদেরই এটি পরিচালনার দায়িত্ব দিয়েছে। তবে ঈদের পর থেকে সার্ভিসটি বন্ধ রাখা দুঃখজনক। কারণ সরকার এখনো প্রতি বছর এই খাতে প্রায় চার কোটি টাকা ভর্তুকি দেয়। অবশ্য ফেরিসহ নদীপথের অন্যান্য খাত থেকে যে লাভ হয় সেখান থেকেই এই ব্যয় নির্বাহ করা হয়।
বিআইডব্লিউটিসির ওই কর্মকর্তা বলেন, ‘একেকটি বাস তৈরি করতে ৫০ লাখ টাকার মতো খরচ হয়েছে। আমরা এই সেবা বাড়ানোর জন্য আরো চারটি অত্যাধুনিক ওয়াটার বাস তৈরির কাজ অলরেডি শুরু করেছি।
তিনি আরো বলেন, ঢাকার চারপাশের নদীর সৌন্দর্য বাড়ানোর জন্য বিশ্বব্যাংক আড়াই হাজার কোটি টাকা সহায়তা দেবে। আমার মনে হয়, জনস্বার্থে সরকার যেকোনো মূল্যে এই সার্ভিসটি চালু রাখবে।
আশরাফের ইঞ্জিন পরিবর্তন বিষয়ক প্রস্তাবের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এটা আমার বিষয় নয়। এটা ইঞ্জিনিয়াররা দেখবেন।



This post has been seen 527 times.

সর্বশেষ শিরোনাম

অনুসন্ধান ক্যালেন্ডার

শনি রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র
 
১০
১১১২১৩১৪১৫১৬১৭
১৮১৯২০২১২২২৩২৪
২৫২৬২৭২৮২৯৩০৩১