সিলেট ২৪শে জানুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ১০ই মাঘ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ২৪শে রজব, ১৪৪৬ হিজরি
প্রকাশিত: ৮:৪১ অপরাহ্ণ, নভেম্বর ৮, ২০১৬
নিউ সিলেট ডেস্ক ::::: ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের সকালবেলা একটি সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে বাংলাদেশে গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত একটি সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করা হয়। সৈন্যরা রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমানের বাসভবনে হামলা চালায়। রাষ্ট্রপতি ও আমার নানা শেখ মুজিবুর রহমানকে নির্মমভাবে গুলি করে হত্যা করে। হত্যা করে তার পরিবারের আরও ১৮ সদস্যকে। তাদের মধ্যে ছিলেন আমার নানী, আমার তিন মামা (যাদের মধ্যে একজনের বয়স ছিল ১০) এবং আমার গর্ভবতী মামি।
আমার মা বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বেঁচে যান কারণ তিনি তখন ছোট বোনের সাথে জার্মানিতে ছুটি কাটাচ্ছিলেন। চল্লিশ বছর পর আমার পরিবারের খুনীদের একজন রাশেদ চৌধুরী মুক্তভাবে ঘুরাফেরা করছেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে। বাংলাদেশের আদালতে তার বিচার হয়েছে এবং খুনের অভিযোগ ও খুনের ষড়যন্ত্র করার দায়ে তাকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে। সামরিক বাহিনীতে লেফটেন্যান্ট কর্নেল পদের বলে তাকে কোর্ট মার্শালের আওতায় আনা যেত, যদিও সেখানে অনেক অস্বচ্ছ পদ্ধতিতে ও খুব দ্রুত রায় দেওয়া হয়ে থাকে।
আইনের খাতায় পলাতক হিসেবে থাকা রাশেদ চৌধুরী ১৯৯৬ সালে দেশ থেকে পালিয়েছিল। সে তার অপরাধের জন্য শাস্তি ভোগ করেনি। বাংলাদেশ ২০০০ সালে তাকে হস্তান্তরের আবেদন করে। প্রায় দেড় দশক ধরে অপেক্ষা চলছে। বিচারের মুখোমুখি হওয়ার কি তার সময় আসেনি?
আমার নানা যখন মারা যায় তখন আমার বয়স ছিল চার। কিন্ত তার মৃত্যুটা আমার ও আমার পরিবারের ব্যক্তিগত ক্ষতির চেয়েও বেশি। আমাদের পুরো জাতি এর জন্য শোক করেছে।
শেখ মুজিবুর রহমান ছিলেন বাংলাদেশের জাতির পিতা এবং দেশটির প্রথম রাষ্ট্রপতি। এখনো দেশের মানুষ তাকে ভালোবেসে ‘বঙ্গবন্ধু’ মানে বাংলার বন্ধু হিসেবে ডাকে। যে বছর আমি জন্মগ্রহণ করেছিলাম সেই ১৯৭১ সালে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানকে পাকিস্তানের হাত থেকে স্বাধীন করার নেতৃত্ব দিয়েছিলেন তিনি।
সেই যুদ্ধে পাকিস্তানী বাহিনী মাত্র এগারো মাসের মধ্যে ৩০ লাখ বাংলাদেশীকে হত্যা করেছিল। এটাকে গণহত্যা হিসেবেই স্বীকৃতি দিয়ে আসছে বিশ্ব।
আমার নানা সেই যুদ্ধের গভীর ক্ষত সারিয়ে উঠানোর চেষ্টা করছিলেন। স্বৈরাচারী ও বর্বর পাকিস্তানের বিপরীতে তিনি যে বাংলাদেশটি সৃষ্টি করতে চেয়েছিলেন সেটা ছিল একটি গণতান্ত্রিক, সেক্যুলার বাংলাদেশ।
আমার নানার হত্যাকাণ্ডের পর রাজনৈতিক বিশৃঙ্খলা এবং সামরিক শাসনের সূত্রপাত হয়। যে জান্তা অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করে তারা খুনীদের রক্ষা করে। বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান, যে কিনা ১৫ আগস্ট হত্যাকাণ্ডের প্রধান সুবিধাভোগী সে এমন আইন করেছিলো যাতে সেসব হত্যাকারীরা সুরক্ষা পায়। হত্যাকারীরা শুধু বিচারের হাত থেকে রক্ষা পায়নি বরং তাদেরকে সরকারের গুরুত্বপূর্ণ চাকরি ও কূটনৈতিক পদে বসানো হয়। তাদের মধ্যে একজন রাষ্ট্রপতি পদে নির্বাচনও করেছিলেন।
আমার মা যখন ১৯৯৬ সালে একটি গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসেন তখন আমাদের পরিবারের খুনীদের বিচার শুরু হয়। দ্রুত বিচারের জন্য জনতার কাছ থেকে চাপ ছিল। কিন্ত আমার মা জানতেন বিচার শুধু স্বচ্ছ হলে হবে না এটা স্বচ্ছ দেখাতেও হবে। আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা এবং স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে সকল প্রকার সাংবিধানিক সুবিধাসহ বেসামরিক আদালতে তাদের বিচার হয়।
১৯৯৮ সালে ১৫ আগস্ট হত্যাকাণ্ডের অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত হয় ১৫জন সাবেক সামরিক কর্মকর্তা। আপিল ও অন্যান্য প্রক্রিয়া শেষে ২০০৯ সালে বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্ট শেষ রায়টি দেয়। জাতির বহুল প্রত্যাশিত রায়টি কার্যকর হয় পাঁচ খুনীর মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার মাধ্যমে। কাহিনী সেখানেই খতম হয়নি।
১৯৯৬ সালে বিচার শুরুর আগে রাশেদ চৌধুরী ও কয়েকজন ষড়যন্ত্রকারী বাংলাদেশ ছেড়ে পালিয়ে যান। সানফ্রান্সিসকোতে তারা রাজনৈতিক আশ্রয়ের জন্য আবেদন করেছিলেন কিন্ত তাদের বর্তমান স্ট্যাটাস কি সেটা স্পষ্ট নয়। তখন থেকে জানা মতে তিনি লস এঞ্জেলেস ও শিকাগোতে বসবাস করে আসছেন। বাংলাদেশ সরকারের তরফ থেকে অনেক প্রচেষ্টা সত্ত্বেও মার্কিন মুল্লুকে রাশেদ চৌধুরী চোখের সামনে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। যুক্তরাষ্ট্র সরকারের উচিত তাকে আশ্রয় দেওয়া বন্ধ করা।
রাশেদ চৌধুরীকে যদি বাংলাদেশের কাছে হস্তান্তর করা হয় তাকে মৃত্যুদণ্ডের মুখোমুখি হতে হবে। যুক্তরাষ্ট্রের মতই বাংলাদেশেও রাষ্ট্রদ্রোহ, সন্ত্রাসবাদ এবং খুনের শাস্তি মৃত্যুদণ্ড।
আমেরিকায় আশ্রয় নেওয়া খুনী শুধু রাশেদ চৌধুরীই নয় আরেকজন খুনী লে. কর্নেল মহিউদ্দিন আহমেদও আশ্রয় নিয়েছিল। কিন্ত সেখানে তার স্থায়ীভাবে থাকার আবেদনটি নাকচ করে দিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্রের আদালত। ২০০৭ সালে বাংলাদেশ সরকারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছিল লে. কর্নেল মহিউদ্দিন আহমেদকে।
তাকে বাংলাদেশে নিয়ে আসা হয় এবং অন্য চারজন খুনীর সাথে ২০১০ সালে ফাঁসি দেওয়া হয়।
আমার জানা মতে রাশেদ চৌধুরীকে উদ্বাস্তু বা শরণার্থীর মর্যাদা দেওয়া হয়নি। তাহলে তাকে হস্তান্তর করার আইনী বাঁধা থাকে না। তাকে হস্তান্তর করতে দেরি করার কোন যৌক্তিকতা নেই। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের উচিত বাংলাদেশ সরকার যে বারংবার আবেদন করছে সেটাতে সাড়া দেওয়া। যাতে ব্যাপারটার ইতি টানা যায় এবং তাকে যথোপযুক্ত বিচারের আওতায় আনা যায়।
সজীব ওয়াজেদ
বাংলাদেশ সরকারের প্রধান তথ্য ও প্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা।
(৭ নভেম্বর নিউ ইয়র্ক টাইমস-এর মতামত বিভাগে প্রকাশিত কলামের বাংলা অনুবাদ করেছেন সাবিদিন ইব্রাহিম)
শনি | রবি | সোম | মঙ্গল | বুধ | বৃহ | শুক্র |
---|---|---|---|---|---|---|
১ | ২ | ৩ | ||||
৪ | ৫ | ৬ | ৭ | ৮ | ৯ | ১০ |
১১ | ১২ | ১৩ | ১৪ | ১৫ | ১৬ | ১৭ |
১৮ | ১৯ | ২০ | ২১ | ২২ | ২৩ | ২৪ |
২৫ | ২৬ | ২৭ | ২৮ | ২৯ | ৩০ | ৩১ |
EDITOR & PUBLISHER:
JUMAN AHMED
OFFICE : 4/4 SURMA MARKET
SYLHET
EMAIL:newsylhet2016@gmail.com
WEB:www.sylheterkhobor.com
MOB:01712-298815
Design and developed by ওয়েব হোম বিডি