ঝালমুড়ি বিক্রি করে ইঞ্জিনিয়ার বানাচ্ছেন ছেলেদের

প্রকাশিত: ৩:০৫ অপরাহ্ণ, নভেম্বর ৯, ২০১৬

ঝালমুড়ি বিক্রি করে ইঞ্জিনিয়ার বানাচ্ছেন ছেলেদের

নিউ সিলেট ডেস্ক ::::    স্ত্রী আর দুই ছেলেকে নিয়ে জীবিকার খোঁজে ২০০২ সালে জয়পুরহাটের আক্কেলপুর থেকে সাভারে এসেছিলেন সহায়-সম্বলহীন সিরাজুল ইসলাম। নিজে ঝালমুড়ি বিক্রি করতে শুরু করেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় (জাবি) ক্যাম্পাসে। আর স্ত্রী চাকরি নেন গার্মেন্টসে।
স্ত্রী রোজিনা বেগম গার্মেন্টসে কাজ করতে গেলে দেখভাল করার অভাবে পড়াশুনা হচ্ছিল না ছেলেদের। তাই স্ত্রী আর দুই ছেলেকে ফের পাঠিয়ে দিলেন গ্রামের বাড়িতে। সিরাজুল ইসলাম একাই থেকে গেলেন সাভারে।
জাবি ক্যাম্পাসে চৌদ্দ বছর ধরে বিক্রি করছেন ঝালমুড়ি। নিজের থাকা-খাওয়ার জন্য যে যৎসামান্য টাকা লাগে তা রেখে বাকিটা পাঠিয়ে দেন বাড়িতে। ওদিকে রোজিনা বেগমও টুকিটাকি হাতের কাজ করে আয় করেন কিছু কিছু। দু’জনের স্বল্প আয়ে সংসারের পাশাপাশি ব্যয়বহুল পড়ালেখা চলছে দুই ছেলের।
বড় ছেলে রুবেল রাজশাহী পলিটেকনিক থেকে ডিপ্লোমা শেষ করার পর এখন পড়ছেন সোনারগাঁও প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে। মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিএসসি কোর্সের অষ্টম সেমিস্টার চলছে তার। ছোট ছেলে শিখন জয়পুরহাট পলিটেকনিকে ডিপ্লোমা করছেন সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে। ডিপ্লোমা পাস করার পর তাকেও ঢাকায় এনে ভর্তি করাবেন বিএসসি কোর্সে।
ঝালমুড়ি বিক্রি করে প্রতিদিন ৪০০-৪৫০ টাকার মতো আয় হয় সিরাজুল ইসলামের। এ টাকা দিয়েই পড়ালেখার ব্যয়বহন করছেন দুই ছেলের। সামনেই বড় ছেলে রুবেলের সেমিস্টার ফাইনাল। সেমিস্টার ফি লাগবে ৩২ হাজার টাকা। এই টাকা কিভাবে জোগাড় করবেন তা নিয়েই চিন্তিত দেখাচ্ছিল সিরাজুল ইসলামকে।
এত অল্প আয়ে ছেলেদের পড়ার ব্যয়ভার চালাতে কষ্ট হচ্ছে না? এমন জিজ্ঞাসার জবাবে জানালেন, কষ্ট তো হয়ই, মামা। দুই ছেলের চাহিদা পূরণ করতে গিয়ে আমরা বাপ-মা হয়ত একটু কম ভালো খাই, একটু খারাপ জামা কাপড় পড়ি। কিন্ত ছেলেরা একদিন বড় মানুষ হবে, ইঞ্জিনিয়ার হবে এটা যখন ভাবি তখন কষ্টকে আর কষ্ট মনে হয় না। তবে বড় ছেলের সেমিস্টার ফাইনাল চলে আসলে একটু বেশি ঝামেলায় পড়ে যাই আর কি।
ছেলেরা হয়ত একদিন প্রতিষ্ঠিত হবে। ভালো আয় রোজগার করবে। কিন্ত তা কতদিনইবা ভোগ করার সুযোগ পাবেন সিরাজুল ইসলাম আর রোজিনা বেগম! হয়ত পুরো সুফলটাই ভোগ করবে পরবর্তী প্রজন্ম। এভাবেই তো প্রত্যেক মা-বাবা তাদের সন্তানের সুন্দর ভবিষ্যতের জন্য নিঃস্বার্থ ত্যাগ স্বীকার করে যান অম্লান বদনে, যুগের পর যুগ।



This post has been seen 355 times.

সর্বশেষ শিরোনাম

অনুসন্ধান ক্যালেন্ডার

শনি রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র
 
১০
১১১২১৩১৪১৫১৬১৭
১৮১৯২০২১২২২৩২৪
২৫২৬২৭২৮২৯৩০৩১