আজ ভোলাবাসীর সেই ভয়াল ১২ নভেম্বর

প্রকাশিত: ১:৫৩ অপরাহ্ণ, নভেম্বর ১২, ২০১৬

আজ ভোলাবাসীর সেই ভয়াল ১২ নভেম্বর

নিউ সিলেট ডেস্ক ::::::   ভোলাসহ উপকূলবাসীর কাছে ভয়াল ১২ নভেম্বর এক বিভিষীকাময় দুঃস্বপ্নের দিন। দেখতে দেখতে ৪৬ বছর পেরিয়ে গেলেও আজও কান্না থামেনি স্বজনহারা মানুষের।
১৯৭০ সালের এ দিনে বিস্তীর্ণ এলাকা লণ্ডভণ্ড হয়ে ধ্বংসলীলায় পরিণত হয়। মুহূর্তের মধ্যে প্রলয়ঙ্করী ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসে ক্ষত-বিক্ষত করে দেয় উপকূলীয় জনপথ। মৃত্যুপুরীতে পরিণত হয় দ্বীপ জেলা ভোলা। ঘূর্ণিঝড়ের হাত থেকে রক্ষা পেতে ছোটাছুটির আপ্রাণ চেষ্টা করেও শেষ পর্যন্ত ব্যর্থ হন উপকূলের বাসিন্দারা। ওই ঝড়ে ভোলায় নিহত হয় ২ লক্ষাধিক মানুষ। নিখোঁজ হয় সহস্রাধিক। এ ছাড়া মারা যায় লাখ লাখ গবাদিপশুও। ধ্বংস হয় হাজার হাজার ঘর-বাড়ি ও গাছপালা। সম্পদের ক্ষতি হয় প্রচুর যা ছিল পরিসংখ্যানের বাইরে। আজও উপকূলবাসীকে কাঁদায় সে ঝড়ের বিভীষিকাময় স্মৃতি।
১৯৭০ সালের ১২ নভেম্বর। দিনভর গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি ও ঝড়ো বাতাস। সন্ধ্যার পর ঝড় মুহূর্তের মধ্যে ভয়ানক রূপধারণ করে। এরপর গভীর রাতে শুরু হয় ঝড়ের তাণ্ডব। হারিকেনরূপী জলোচ্ছ্বাসের সময় ঝড়টি উপকূলীয় জেলা ভোলা, নোয়াখালী, বরিশাল, বরগুনা, লক্ষ্মীপুর, পটুয়াখালী, বাগেরহাট, খুলনাসহ ১৮টি জেলায় আঘাত হানে।
তৎকালীন সময় তথ্যপ্রযুক্তি দুর্বল থাকায় উপকূলে অনেক মানুষই ঝড়ের পূর্বভাস পায়নি। এ সময় জলোচ্ছ্বাস হয়েছিল ৮/১০ ফুট উচ্চতায়।
কেউ গাছের ডালে, কেউ উঁচু জায়গায় আশ্রয় নিয়ে কোনোমতে প্রাণে রক্ষা পেলেও ১০ দিন পর্যন্ত তাদের না খেয়ে কাটাতে হয়। বেড়িবাঁধ, জলাভূমিসহ বিভিন্ন প্রান্তে স্বজনহারা মানুষেরা প্রিয়জনের লাশ খুঁজে বেড়ায়। ৪৬ বছর আগের এ দিনে এক রাতের ব্যবধানে ভোলার চার ভাগের একভাগ মানুষ নিঃশেষ হয়ে যায়। মৃত্যুপুরীতে পরিণত হয় এখানকার বিস্তীর্ণ জনপদ। সাগর পাড়ের মনপুরা, কুকরী-মুকরী ঢালচরসহ ছোট ছোট দ্বীপচর এবং নদী তীরবর্তী এলাকাগুলোর বেশিরভাগ মানুষই প্রাণ হারান। এমনকি ভোলা শহরও গোর্কির ভয়াল ছোবল থেকে রক্ষা পায়নি। গোটা এলাকা পরিণত হয় মানুষ আর গবাদি পশুর লাশের স্তুপে। পরিস্থিতি এতটাই ভয়াবহ হয়েছিল যে, মা তার প্রিয় সন্তানকে মৃত্যুর কোলে ঠেলে দিতে বাধ্য হয়েছিলেন। সত্তরের সেই যন্ত্রণাময় স্মৃতি নিয়ে এখনো দিন কাটে অনেকের।
ভোলা প্রেসক্লাবের সভাপতি এম হাবিবুর রহমান ভয়াল সে রাতের স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে আবেগ আপ্লুত হয়ে পড়েন। তিনি বলেন, ‘ঝড়ের পর মেঘনা পাড়ে গিয়ে দেখি, স্নেহময়ী মা তার শিশু সন্তানকে জড়িয়ে মরে পড়ে আছেন। চারদিকে শুধু লাশ আর লাশ।’
সেদিনের সেই ঝড়ে বেঁচে আসা চরপাতা ইউনিয়নের বাসিন্দা নুরুল হক জানান, গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি সন্ধ্যার পর থেকে এক পর্যায়ে দমকা হাওয়ায় পরিণত হয়। আস্তে আস্তে পানি বাড়তে থাকে। পানি প্রথমে ভিটায় পরে ঘরের চাল পর্যন্ত ছুঁয়ে যায়। তিনি একটি গাছ ধরে কোনো মতে প্রাণ রক্ষা পান।
মৃত্যুপুরী থেকে বেঁচে আসা শাহে আলম জানান, পরদিন সকালে এতো মানুষ আর গবাদি পশুর লাশ দেখতে পান তারা যা আলাদা আলাদা ভাবে কবর দেওয়া সম্ভব হচ্ছিল না। তাই মানুষ আর পশুকে এক সাথেই গর্ত করে পুঁতে রাখতে হয়।
সত্তরের পর ভোলার মানুষ একাধিকবার এমনিভাবে ঝড়-ঝঞ্জা আর জলোচ্ছ্বাসের কবলে পড়েছেন। তবে ভোলাবাসী সব ভুলে গেলেও গোর্কির কথা কোনোভাবেই ভুলতে পারেনি।
সত্তরের বন্যার পর সিডর, আইলা, মহাসেন, রোয়ানু ও নাধার মতো ঝড় বয়ে গেলেও উপকূলবাসীর জন্য আজ পর্যপ্ত সাইক্লোন সেল্টার নির্মাণ করা হয়নি। ফলে ভোলার সমগ্র উপকূলের মানুষ এখনও অনিরাপদ বলে অভিযোগ এলকাবাসীর। সত্তরের গোর্কির মতো ভোলাবাসীকে এমন নির্মম ধ্বংসযজ্ঞের কবলে যেন আর পড়তে না হয়, এমনটাই প্রার্থনা দেশের মূল ভূ-খণ্ড থেকে বিচ্ছিন্ন দ্বীপজেলা ভোলার ২২ লাখ মানুষের।



This post has been seen 368 times.

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

সর্বশেষ শিরোনাম

অনুসন্ধান ক্যালেন্ডার

শনি রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র
 
১০
১১১২১৩১৪১৫১৬১৭
১৮১৯২০২১২২২৩২৪
২৫২৬২৭২৮২৯৩০৩১