অপহৃত ২৮ দিনের শিশু মাহির উদ্ধার

প্রকাশিত: ৯:২১ অপরাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ২৬, ২০১৭

অপহৃত ২৮ দিনের শিশু মাহির উদ্ধার

নিউ সিলেট ডেস্ক : মাত্র ৩৮ দিন হলো পৃথিবী এসেছে ছোট্ট মাহির পিয়াস। এরই মধ্যে শিকার হলো অপহরণের। ছোট্ট মাহিরকে হারিয়ে পাগলপ্রায় মা পাখি আক্তার। ছেলের সন্ধান পেতে পুলিশের দ্বারস্থ হন মা। ঘটনাটি নাড়া দেয় পুলিশের সদস্যদের। নির্ঘুম ২৬ ঘণ্টার চেষ্টায় অবশেষে মাহিরকে মায়ের কোলে ফিরিয়ে দিতে সক্ষম হয়েছেন পুলিশ বিভাগের চৌকস সদস্যরা।
প্রাথমিক তদন্তে পুলিশ শিশু মাহির অপহরণে তার বাবার সম্পৃক্ততা দেখতে পাচ্ছে। মাদকাসক্তির কারণে প্রায় বাগবিতণ্ডা হতো স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে। নেশা নেয়ার প্রতিবাদ করায় মাস-দুয়েক আগে পাখিকে বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছিলেন সম্রাট। পাখি গিয়ে ওঠেন বান্ধবীর বাসায়। সেখানেই জন্ম হয় মাহিরের। এরপর পাখি স্বামীর সঙ্গে কোনো যোগাযোগ না করায় ক্ষিপ্ত হয়ে স্ত্রীকে ফাঁসাতে নিজ শিশুসন্তানকে অপহরণ করেন তিনি। ইতোমধ্যে এ ঘটনায় বাবা সম্রাট ও শিশুটিকে বহনকারী ময়না নামের এক নারীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। ময়না বেগমের বাড়ি যাত্রাবাড়ী এলাকার কলাপট্টিতে।
ঘটনার সম্পর্কে জানা যায়, সোমবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে যাত্রাবাড়ির বাঁশপট্টি এলাকা থেকে বাচ্চাটি অপহৃত হয়। ছেলেটির বয়স মাত্র ৩৮ দিন। মায়ের অভিযোগের পর রাজধানীর যাত্রাবাড়ি থানার পুলিশ তাকে উদ্ধারে জোর তৎপরতা শুরু করে। কিন্তু কোনোভাবেই সন্ধান করতে পারছিলেন না অভিযানে থাকা পুলিশ সদস্যরা। পরে পুলিশের ডেমরা জোনের সিনিয়র সহকারী কমিশনার ইফতেখায়রুল ইসলাম নিজের ফেসবুক ওয়ালে শিশুটিতে উদ্ধারে সহায়তা করতে সবার সহযোগিতা চেয়ে পোস্ট দেন।
পুলিশের ওয়ারী জোনের উপকমিশনার মোহাম্মদ ফরিদ উদ্দিনও অভিযানে থাকা পুলিশ সদস্যদের তৎপরতা বন্ধ না করার নির্দেশ দেন। তার পরামর্শে রাতেই মানবপাচার আইনে অজ্ঞাতনামাদের বিরুদ্ধে মামলা হয়। মামলা নং ৮৪।
এদিকে পুলিশের সম্মিলিত চেষ্টার ফলে একপর্যায়ে অপহরণকারীরা সোমবার মধ্যরাতে শিশুটিকে একই এলাকার কালাপট্টি এলাকায় ফেলে রেখে পালিয়ে যায়। পরে পুলিশ শিশুটিকে মায়ের কোলে ফিরিয়ে দেন। উদ্ধারের কথা জানিয়ে ইফতেখায়রুল ইসলাম ফেসবুকে দেয়া পোস্টে বলেন, বাচ্চাটাকে দেখে নিজের বাচ্চার কথা মনে পড়ছে বারবার। বাচ্চাটির নাম রাখা হয়েছে- মাহির পিয়াস, আজ তার ৩৯তম দিন! এত ছোট বাচ্চা মায়ের কোল থেকে খালি হয়ে গেলে সেই মাকে পুরো পৃথিবী দিয়েও তুষ্ট করা যায় না। গতকাল সকাল ১১:৩০টায় বাচ্চাটি অপহৃত হয়! সকাল থেকেই যাত্রাবাড়ি থানা পুলিশ জোর তৎপরতা শুরু করে! সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ ছিল বাচ্চা দ্রুত উদ্ধার না হলে বড় ক্ষতি হয়ে যেতে পারে। বাচ্চার ছবি দেখার পরপর নিজের বাচ্চার কথা মনে পড়ছিল বারবার, যার ফলশ্রুতিতে আমিসহ আমার অফিসারেরা গত ২৬ ঘণ্টায় দুই ঘণ্টাও ঘুমুতে পারিনি।
বাচ্চার মা পাখি বারবার বলছিলেন, আমার বাচ্চা উদ্ধার না হলে আমি পুলিশ প্রশাসনের উপর আর বিশ্বাস রাখমুনা, আমার বাচ্চা আইনা দেন।
ইফতেখায়রুল ইসলাম লেখেন, কান্নাজড়িত কণ্ঠে কোনো সন্তানহারা মা যখন কথা বলে, তখন নিজেকে অসহায় লাগে। আমার সম্মানীত ডিসি স্যার মোহাম্মদ ফরিদ উদ্দিন বারবার বলছিলেন “ইফতেখার, বেশি দূরে যায়নি, আশেপাশে কোথাও আছে, তৎপরতা বন্ধ করো না।” তাই রাতের অন্ধকারে আমি, আমার ইন্সপেক্টর তদন্ত ও মামলার আইও এসআই শাহিদ চারপাশ তন্ন তন্ন করে খুঁজছিলাম। আমাদের সম্মিলিত তৎপরতায় মানুষরূপী পশুর দল আমাদের ছোট্ট মাহিরকে এক বিশেষ জায়গায় রেখে যেতে বাধ্য হয়। গতকাল মধ্যরাতে আমরা ছোট্ট বাবাকে তার মায়ের কোলে ফিরিয়ে দিয়েছি।
শিশুটিতে উদ্ধারে যারা সহায়তা করেছেন, খবর নিয়েছেন, তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে এই পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, কানে শুধু একটা কথাই বাজছিল “আমার সন্তান না পেলে আমি পুলিশের উপর বিশ্বাস রাখুম না। বাচ্চার মায়ের এই কথাকে ভুল প্রমাণ করে তাঁর বিশ্বাস ফিরিয়ে আনতে পেরেছি- এটাই আমাদের সার্থকতা। আমাদের সন্তান যেন থাকে দুধে ভাতে।
জানতে চাইলে পুলিশের ডেমরা জোনের সিনিয়র সহকারী কমিশনার ইফতেখায়রুল ইসলাম বলেন, আমরা ইতিমধ্যে অপহরণকারী শিশুটির বাবাসহ দুই সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছি। আমরা ভাবতেও পারিনি এমন ঘটনায় স্বয়ং জন্মদাতা বাবা জড়িত থাকতে পারেন। বাবা সম্রাটকে গ্রেপ্তারের পর জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে । দায়েরকৃত মামলায় বাবাসহ গ্রেফতার দুজনের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে বলে জানান তিনি।dt/ns/-



This post has been seen 247 times.

সর্বশেষ শিরোনাম

অনুসন্ধান ক্যালেন্ডার

শনি রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮