যুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করেছি মাথা উঁচু করে চলব : প্রধানমন্ত্রী

প্রকাশিত: ১২:৪৩ অপরাহ্ণ, নভেম্বর ২৬, ২০১৭

যুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করেছি মাথা উঁচু করে চলব : প্রধানমন্ত্রী

নিউ সিলেট ডেস্ক : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বিদেশের সঙ্গে সম্পর্ক ও আচরণে বাংলাদেশ সমতা ও সমমর্যাদার নীতিতে থাকবে। বিভিন্ন দেশে কর্মরত কূটনীতিকদেরকে উদ্দেশ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আমরা যুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করেছি। বিজয় অর্জন করেছি, আমরা মাথা উঁচু করে চলব।
রবিবার (২৬ নভেম্বর) রাজধানীতে অনুষ্ঠিত রাষ্ট্রদূত সম্মেলনে এ কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে কূটনৈতিক মিশনে কর্মরতরা এই সম্মেলনে যোগ দেন। দীর্ঘ বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী কূটনৈতিক ক্ষেত্রে তার সরকারের আমলের সাফল্য, নতুন নতুন মিশন স্থাপনসহ নানা উদ্যোগের কথা তুলে ধরেন। সেই সঙ্গে বাংলাদেশের পণ্য ও জনশক্তির জন্য নতুন নতুন বাজার সন্ধানে কূটনীতিকদের নির্দেশ দেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের বন্ধুত্ব হবে সমতার ভিত্তিতে। আমরা সমমর্যাদা নিয়ে চলব, কারো কাছে করুণা ভিক্ষা নিয়ে চলবো না। আপনারা বিদেশে আমাদের রাষ্ট্রদূত। আপনারাই বিদেশে একটা করে বাংলাদেশ। আপনারা এভাবে কথা বলবেন, যেন সমমর্যাদা থাকে। আমরা এভাবেই চলতে চাই।
শেখ হাসিনা বলেন, ১৯৭৫ সাল থেকে ১৯৯৬ সাল অবধি বিশ্বে বাংলাদেশকে সবাই করুণার চোখে দেখতো মনে হতো আমরা তাদের কাছে ভিক্ষা চাইতে গেছি। আমাদের বাজেট বিদেশি সাহায্য ছাড়া চলত না, আমাদের উন্নয়ন প্রকল্পগুলো তাদেরকে ছাড়া চলত না। এসব দেখে আমার কষ্ট হতো। কারণ ছোটবেলায় দেখেছি আবার বাবা স্বাধীনতার জন্য সংগ্রাম করেছেন। আমরা বিজয়ী জাতি, কীভাবে আমরা এত ছোট হয়ে থাকব?
প্রধানমন্ত্রী বলেন, মনে মনে কষ্ট হতো, ভাবতাম, যদি কখনও ক্ষমতায় যেতে পারি কী কী করণীয় থাকবে আমাদের, কীভাবে দেশের মর্াদা আমরা ফেরাব।
তিনি বলেন, ৯৬ থেকে ২০০১ এবং ২০০৯ থেকে ২০১৭ সালে ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় পরিস্থিতি এখন পাল্টে গেছে। আপনারা যারা বিদেশে আছেন, আপনারা উপলব্ধি করেন, বাংলাদেশকে কেউ করুণার চোখে দেখে না, বাংলাদেশকে এখন হিসাবে নেয় তারা।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রতিবেশী দেশের সাথে সমস্যা সমাধানে দ্বিপাক্ষিক আলোচনার নীতির কথা জানান। এ ক্ষেত্রে তৃতীয় পক্ষ ডাকার পক্ষপাতি নন তিনি। বলেন, গঙ্গার পানিবণ্টন আর পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি করার পর ভারত থেকে শরণার্থীদেরকে ফিরিয়ে আনার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ তৃতীয় পক্ষের কোনো সহযোগিতা নেয়নি।
শেখ হাসিনা বলেন, এগুলোর সমাধান করা দরকার। এ ক্ষেত্রে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে মিয়ানমারের সঙ্গে করা সমঝোতা স্মারকের কথা তুলে ধরেন তিনি। এই সমঝোতা অনুযায়ী মিয়ানমার রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেবে বলেও আশাবাদী শেখ হাসিনা।
রোহিঙ্গা সংকটে বাংলাদেশ সারা বিশ্বের সমর্থন পেয়েছে জানিয়ে একে কূটনৈতিক ক্ষেত্রে সরকারের বড় সাফল্য হিসেবে তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা মানবিক কারণে (রোহিঙ্গাদের) আশ্রয় দিয়েছি বলে বিশ্বের প্রতিটি দেশ সাধুবাদ দিচ্ছ, আমাদের সমর্থন তিচ্ছে। বাংলাদেশ কখনও কূটনৈতিকভাবে এত সাফল্য অর্জন করতে পারেনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, মিয়ানমার ভারতের সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রেখেও আন্তর্জাতিক আদালতে মামলা করে জয়ী হয়েছি। এটা কতটা কূটনৈতিক সাফল্য আপনারা বিবেচনা করুন। প্রতিবেশীদের সঙ্গে দরজা বন্ধ রেখে চলা যায় না’ মন্তব্য করে দারিদ্র্য দূরীকরণে বাংলাদেশ আঞ্চলির সহযোগিতার নীতিতে চলবে।এই অঞ্চলে আমাদের একটাই শত্রু, দারিদ্র্য। এর বিরুদ্ধে আমাদেরকে একসঙ্গে লড়াই করতে হবে। এখানে এককভাবে এত বড় কাজ করা সম্ভব নয়। বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে হবে, প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গেও কাজ করতে হবে। আমরা নিজের দেশকেও যেমন দারিদ্র্যমুক্ত করতে চাই, তেমনি প্রতিবেশী দেশও যেন দারিদ্র্যমুক্ত হয়, সেটাও আমাদের চাওয়া, এ জন্য যা যা করণীয় আমরা করব।
জঙ্গিবাদকে বৈশ্বিক সমস্যা আখ্যা দিয়ে এটা দূর করতে আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক সহযোগিতার কথাও বলা হয় সম্মেলনে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আামরা বাংলাদেশের মাটিতে কোনো রকম জঙ্গিবাদ হতে দেব না। তেমনি আমাদের ভূখণ্ডকে ব্যবহার করে প্রতিবেশী দেশে সন্ত্রাস চালাবে, সেটাও আমরা হতে দেবো না। বাংলাদেশ অস্ত্র চোরাকারবারির রাস্তা হবে, সেটা আমরা কোনোভাবে চাই না। এটা করতে গেলেও প্রতিবেশীদের সঙ্গে যে সুসম্পর্ক, সহযোগিতা দরকার, তেমনি আন্তর্জাতিক সহযোগিতা দরকার।
বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার বিভিন্ন দেশে ১০টি মিশন বন্ধের উদ্যোগ নিয়েছিল জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বর্তমান সরকার ২৭টি নতুন মিশন চালু করেছে। আর পুনঃস্থাপন হয়েছে তিনটি। এর একটিই উদ্দেশ্য, বাংলাদেশের বাণিজ্য বৃদ্ধি। কূটনীতিকদেরকে সেভাবেই কাজ করার তাগাদা দেন তিনি।
সেই সঙ্গে প্রবাসী বাঙালিরা যেন হয়রানির শিকার না হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখা, তাদের সঙ্গে মানবিক আচরণ করার নির্দেশ দেয়া হয় সম্মেলনে।
যুদ্ধাপরাধীর অনুসারী এবং জাতির জনকের খুনিরা এখনও সরকারের বিরুদ্ধে নানা ষড়যন্ত্রে লিপ্ত জানিয়ে, তাদের অপপ্রচারের বিরুদ্ধে সোচ্চার হতেও কূটনীতিকদের নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী। বঙ্গবন্ধুর খুনিদেরকে বিভিন্ন কূটনৈতিক মিশনে চাকরি দেয়াটাকে জাতির জন্য লজ্জা হিসেবেও আখ্যা দেন শেখ হাসিনা।dt/ns/-



This post has been seen 303 times.

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

সর্বশেষ শিরোনাম

অনুসন্ধান ক্যালেন্ডার

শনি রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র
 
১০
১১১২১৩১৪১৫১৬১৭
১৮১৯২০২১২২২৩২৪
২৫২৬২৭২৮২৯৩০৩১