সিলেট ২৪শে জানুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ১০ই মাঘ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ২৪শে রজব, ১৪৪৬ হিজরি
প্রকাশিত: ১০:৫২ অপরাহ্ণ, ডিসেম্বর ২৭, ২০১৭
নিউ সিলেট ডেস্ক : শিক্ষা মন্ত্রণালয় প্রশ্নফাঁস ঠেকাতে নানা উদ্যোগের পর এবার নতুন পথে হাঁটতে যাচ্ছে। এর অংশ হিসেবে আগামী শিক্ষাবর্ষ থেকে ‘প্রশ্নব্যাংক’র মাধ্যমে প্রশ্ন তৈরি করে মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলোতে পাঠানো হবে। সেই প্রশ্নে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। এর তদারকি করবে সংশ্লিষ্ট শিক্ষাবোর্ডগুলো। পরীক্ষামূলক হিসেবে শুরুতে মাধ্যমিক স্তরে এ পদ্ধতি প্রয়োগ হবে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, মাধ্যমিক-পর্যায়ের বিদ্যালয়ের অর্ধবার্ষিক ও বার্ষিক পরীক্ষার সব প্রশ্ন প্রশ্নব্যাংক থেকে নির্বাচন করতে হবে। প্রশ্নফাঁস কেলেঙ্কারি থেকে বেরিয়ে আসতে প্রশ্নব্যাংকের মাধ্যমে প্রশ্ন তৈরির সিদ্ধান্ত হয়েছে। এতে একদিকে প্রশ্নফাঁস কমবে, অন্যদিকে কমবে মুখস্থ বিদ্যার প্রবণতা। মুখস্থনির্ভর পড়াশোনা থেকে শিক্ষার্থীদের সরিয়ে আনা, কোচিং-প্রাইভেট ও নোট-গাইডের ব্যবহার বন্ধের লক্ষ্যে ২০০৫ সালে চালু করা হয় সৃজনশীল পদ্ধতি। কিন্তু এ পদ্ধতি বাস্তবায়নে শিক্ষকদের দেশে-বিদেশে প্রশিক্ষণের নামে সরকার শত কোটি টাকা খরচ করেও কাঙ্ক্ষিত ফল পায়নি। শিক্ষকরাই সৃজনশীল পদ্ধতি ঠিকমতো না বোঝায় তারা ক্লাসে ভালোভাবে শিক্ষার্থীদের পাঠদান করতে পারছেন না।
সরকারি সমীক্ষা বলছে, ২০০৫ সালে সৃজনশীল পদ্ধতি চালু হলেও গত ১২ বছরে মাত্র ৫৬ শতাংশ শিক্ষক এটি আয়ত্ত করতে পেরেছেন। শিক্ষকরা যাতে এ পদ্ধতি বুঝতে পরিশ্রম করেন সেজন্য স্কুলের অভ্যন্তরীণ পরীক্ষার প্রশ্ন বাইরে থেকে না কেনারও নির্দেশনা ছিল। এ বিষয়ে পরিপত্রও জারি করে মন্ত্রণালয়। কিন্তু সৃজনশীল পদ্ধতি না বোঝায় অনেক শিক্ষক তা মানছেন না। বিভিন্ন প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান ও শিক্ষক সমিতি থেকে প্রশ্ন কিনে পরীক্ষা নেন তারা। এমনকি, স্কুল-কলেজ তো বটেই, পাবলিক পরীক্ষায়ও বিভিন্ন নোট-গাইড থেকে হুবহু প্রশ্ন তুলে দেয়ার ঘটনাও ঘটছে প্রতি বছর।
অন্যদিকে, শিক্ষার্থীরা আগে এক কোম্পানির গাইড কিনলেও এখন সৃজনশীল প্রশ্নের বেশি উদ্দীপক পাওয়ার আশায় একাধিক কোম্পানির গাইড কিনছে। সেসঙ্গে ক্রমেই শিক্ষার্থীদের পড়াশোনা শ্রেণিকক্ষের পরিবর্তে কোচিং সেন্টার নির্ভর হয়ে পড়েছে। শিক্ষকরা এ পদ্ধতি ভালোভাবে না বোঝায় শহর থেকে শুরু করে প্রত্যন্ত এলাকা পর্যন্ত যত্রতত্র গড়ে উঠেছে বাণিজ্যিক কোচিং সেন্টার। পাশাপাশি শিক্ষকদের নিজস্ব কোচিং ব্যবসাও জমজমাট হয়ে উঠেছে। গণসাক্ষরতা অভিযানসহ (ক্যাম্পে) বিভিন্ন সংস্থার সমীক্ষাতেও এসব তথ্য উঠে এসেছে। এরপরই টনক নড়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের। এ সংকট কাটিয়ে উঠতে বাংলাদেশ পরীক্ষা উন্নয়ন ইউনিটের (বেডু) নেতৃত্বে যশোর শিক্ষাবোর্ডের তত্ত্বাবধানে তৈরি করা হয় প্রশ্নব্যাংক। যার প্রযুক্তিগত সহযোগিতা দিচ্ছে ভারতীয় একটি আইটি প্রতিষ্ঠান।
যশোর শিক্ষাবোর্ড সূত্র জানায়, ২০১৫ সালের মে মাসে অনলাইন প্রশ্নব্যাংক তৈরির কাজ শুরু হয়। গত বছরের মার্চ মাসে অনলাইন প্রশ্নব্যাংকের সফটওয়্যার পরীক্ষামূলকভাবে চালু হয়। এ বছর যশোর বোর্ডের অধীন সব বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির বার্ষিক ও মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট (এসএসসি) টেস্ট পরীক্ষার প্রশ্ন ওই প্রশ্নব্যাংক থেকে হয়েছে।
সূত্র আরও জানায়, এজন্য প্রতিটি বিষয়ে ২০ থেকে ২২ জন মাস্টার ট্রেইনার শিক্ষক রয়েছেন। প্রতিটি বিদ্যালয়ে প্রশ্ন আপলোডের প্যানেল রয়েছে। প্রধান শিক্ষক প্যানেলপ্রধান। তিনি ঠিক করে দেন কোন শিক্ষক কোন বিষয়ের প্রশ্ন সফটওয়্যারে আপলোড করবেন। শিক্ষর্থীদেরও প্রশ্ন তৈরির সুযোগ রয়েছে। কোনো শিক্ষার্থী প্রশ্ন আপলোড করতে চাইলে প্রধান শিক্ষক তাকে সে সুযোগ করে দেবেন। তবে প্রশ্ন মানসম্পন্ন না হলে সফটওয়্যারে আপলোড নেবে না।
প্রশ্নব্যাংকের ধারণাপত্রে বলা হয়েছে, শিক্ষাবোর্ডের অধীন সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বিষয়ভিত্তিক শিক্ষককে বাধ্যতামূলকভাবে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠপুস্তক বোর্ডের সিলেবাস অনুযায়ী প্রশ্নপত্র তৈরির নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বর্তমানে শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও অভিভাবক সবাই পরীক্ষার ফলাফলই শিক্ষার মূল্যায়ন বলে মনে করছেন। এজন্য শিক্ষার্থীরা পাঠ্যবই বাদ দিয়ে গাইড বা নোটবই মুখস্থ করে ভালো ফলাফলের চেষ্টা চালায়। শিক্ষার্থীরা সৃজনশীল হওয়ার পরিবর্তে মুখস্থনির্ভর হয়ে পড়ছে। শিক্ষকরাও নিজেরা প্রশ্ন না করে গাইড, শিক্ষক সমিতি বা বিভিন্ন প্রকাশনীর কাছ থেকে প্রশ্ন সংগ্রহ করে পরীক্ষা নেন। ফলে পাসের হার বাড়লেও শিক্ষার মান নিয়ে বারবার প্রশ্ন উঠছে। তাই প্রশ্নব্যাংকের মাধ্যমে সারাদেশে পরীক্ষা নিলে প্রশ্নফাঁস বন্ধ হবে। পরীক্ষার মান নিয়েও কোনো প্রশ্ন থাকবে না।
এ বিষয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, পরীক্ষার দিন বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ স্থানীয় প্রশাসনের মাধ্যমে বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করবেন। বিদ্যুৎ বিভ্রাটের আশঙ্কা থাকলে জেনারেটর ভাড়া করে রাখবেন। বিদ্যালয়ে প্রশ্নপত্র ফটোকপির ব্যবস্থা না থাকলে স্থানীয়ভাবে ফটোকপির দোকানের সঙ্গে চুক্তি করে ছাপিয়ে নেবেন। এটি তেমন জটিল নয়। সম্প্রতি যশোর বোর্ডের এক কর্মশালায় প্রত্যন্ত এলাকার ৪০টি বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকরা এমন দাবি করেছেন বলে মন্ত্রণালয়ের একজন অতিরিক্ত সচিব জানিয়েছেন।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব চৌধুরী মুফাদ আহমেদ বলেন, সৃজনশীল বিষয়ে দক্ষতার অভাবে শিক্ষকরা নোট-গাইড থেকে হুবহু প্রশ্ন করছেন। পাঠ্যবই থেকে প্রশ্ন না করায় শিক্ষার্থীরা নোট-গাইড নির্ভর হচ্ছে। নোট-গাইডের প্রভাবমুক্ত করতে যশোর শিক্ষাবোর্ড প্রশ্নব্যাংক তৈরি করেছে। প্রশ্নব্যাংক থেকে সারাদেশে পরীক্ষা নিলে শিক্ষার্থীরা পাঠ্যবই পড়বে। কোচিংবাণিজ্য বন্ধ হবে।
তিনি আরও বলেন, পাবলিক পরীক্ষার কেন্দ্র রয়েছে সেসব স্কুলে আগামী শিক্ষাবর্ষ থেকে প্রশ্নব্যাংক থেকে অর্ধবার্ষিক ও বার্ষিক পরীক্ষা নেয়ার নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়েছে। এটা সফল হলে পাবলিক পরীক্ষাও একইভাবে নেয়া হবে। এ প্রক্রিয়ায় প্রশ্নফাঁস বন্ধ হবে বলেও তিনি আশা প্রকাশ করেন।n24/ns/-
শনি | রবি | সোম | মঙ্গল | বুধ | বৃহ | শুক্র |
---|---|---|---|---|---|---|
১ | ২ | ৩ | ||||
৪ | ৫ | ৬ | ৭ | ৮ | ৯ | ১০ |
১১ | ১২ | ১৩ | ১৪ | ১৫ | ১৬ | ১৭ |
১৮ | ১৯ | ২০ | ২১ | ২২ | ২৩ | ২৪ |
২৫ | ২৬ | ২৭ | ২৮ | ২৯ | ৩০ | ৩১ |
EDITOR & PUBLISHER:
JUMAN AHMED
OFFICE : 4/4 SURMA MARKET
SYLHET
EMAIL:newsylhet2016@gmail.com
WEB:www.sylheterkhobor.com
MOB:01712-298815
Design and developed by ওয়েব হোম বিডি