জুমান আহমেদ॥  জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতা ও গণফোরামের সভাপতি ড. কামাল হোসেন বলেছেন, দেশের মানুষ তার গণতান্ত্রিক সকল অধিকার থেকে আজ বঞ্চিত। তারা বঞ্চিত ভোটের অধিকার থেকেও । তিনি বলেন, জনগন এই দেশের মালিক, ক্ষমতার মালিক। সকল গণতান্ত্রিক অধিকার ফিরে পেতে হলে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। এদেশের জনগণ অধিকার আদায়ে যখনই ঐক্যবদ্ধ হয়েছে তখনই বিজয় ছিনিয়ে এনেছে।
গতকাল বুধবার বিকেলে সিলেটের রেজিস্ট্রি মাঠে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের প্রথম সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন ।
কামাল হোসেন বলেন, আমাদের ৭দফা দাবি এর মধ্যে প্রথমটি হচ্ছে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন। এর সাথে আরো ১১টি লক্ষ রয়েছে। এসব দাবি আজ থেকে দেশের প্রতিটি গ্রামে, থানায়, উপজেলায় ও জেলায় পৌঁছে দিতে হবে।
বিএনপি কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ও সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীর সভাপতিত্বে তিনি আরো বলেন, দেশের উন্নয়ন হয়েছে বলে সরকার যে হুকার করে। উন্নয়ন হয়েছে তাদের মুষ্ঠিমেয় মানুষের উন্নয়ন। আমরা চাই এদেশের ১৬ কোটি মানুষের উন্নয়ন। মানুষের ভাগ্যের উন্নয়নে আমরা ইনশাআল্লাহ বিজয়ী হবো। আমাদের বিজয় অনিবার্য। তিনি অবিলম্বে বিএনপির চেয়াপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবি জানান।
প্রধান বক্তার বক্তব্যে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, সিলেট থেকে অনেক ইতিহাসের জন্ম হয়েছে। আজ আরেকটি ইতিহাসের জন্ম হবে। এই ইতিহাস হচ্ছে গণতন্ত্র মুক্তির ইতিহাস।
মির্জা ফখরুল বলেন, আজ থেকে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নতুন লড়াইয়ের শুরু হলো। খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে হবে। ফিরিয়ে আনতে হবে আমাদের অধিকার। গণতন্ত্রকে মুক্ত করতে হবে। তিনি বলেন, সরকারকে পরিষ্কার করে বলতে চাই, তফসিল ঘোষণার আগে পদত্যাগ করুন। নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দিন। ইভিএম দেয়া চলবে না। ডিজিটাল চুরি করতে দেয়া হবে না। নির্বাচনে সেনাবাহিনী মোতায়েন করতে হবে।
জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল জেএসডি’র সভাপতি ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নেতা আ স ম আব্দুর রব বলেছেন, দেশ ডাকাতের হাতে পড়েছে। আজ দেশকে বাঁচাতে হবে। তিনি বলেন, খালেদার মুক্তি চাইলে রাজপথে নামতে হবে। আমাদের যে লড়াই, এই লড়াই বাঁচার লড়াই, ভোটের লড়াই, গণতন্ত্রের লড়াই। এ লড়াইয়ে জিততে হবে।
গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান ড. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, উন্নয়নের জোয়ারে নৌকা ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেছে। বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে অন্যায়ভাবে কারাগারে আটকে রাখা হয়েছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, দেশে আইনের সংস্কার প্রয়োজন। আপনারা যদি সমর্থন করেন আমরা যদি বিজয়ী হই, তবে তিন মাসের মধ্যে দেখবেন দেশে ওষুধের দাম অর্ধেক হয়ে গেছে, চিকিৎসা খরচ অর্ধেক হয়ে যাবে।
বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, বর্তমান সরকার জনগনের নির্বাচিত সরকার নয়। তারা আবারও প্রহসনের নির্বাচন করে ক্ষমতায় আসতে চায়। তারা ইলিয়াস আলীসহ শত শত ব্যক্তিকে গুম করেছে। জনগনের কাছে তার জবাব দিতে হবে। সব লুটপাটের জবাব দিতে হবে। এজন্য তারা জনগনকে ভয় পায়। তিনি আরো বলেন, খালেদা জিয়াকে অন্যায়ভাবে কারাগারে আটকে রাখা হয়েছে। আগামী নির্বাচনের আগে তাকে মুক্তি দিতে হবে।
নাগরিক ঐক্যের আহবায়ক ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নেতা মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া এখন জেলে। তাকে জারাকীর্ণ রেলে রাখা হয়েছে। এর কারণে তিনি এখন নানা রোগে আক্রান্ত। ৭৩ বছর বয়সে তাঁর জেল খাটার কথা না। দেশে কোটি কোটি টাকা লুটপাট হয়েছে তার বিচার হয়নি। কিন্তু ২কোটি টাকা ফেপে ফোলে ৫ কোটি টাকা হয়ে আজ মিথ্যা মামলা দিয়ে তাকে জেল খাটতে হচ্ছে। আমরা সবাই খালেদা জিয়ার মুক্তি চাই।
গত সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনের কথা উল্লেখ করে মান্না বলেন, সরকার চোরের মতো, ডাকাতের মতো ভোট ডাকাতি করছে। সিলেটের মানুষ সাহস দিয়ে, বুদ্ধি দিয়ে, মেধা দিয়ে সিটি নির্বাচনে আরিফুল হক চৌধুরীকে বিজয়ী করেছে। তিনি আরো বলেন, কেউ যদি পারেন, (এই সমাবেশের) একটি ভিডিও প্রধানমন্ত্রীকে পাঠিয়ে দেবেন। তিনি অবাক হবেন, এতো বাধার পরেও কিভাবে এতো মানুষ হলো সমাবেশে।
গণফোরামের নির্বাহী সভাপতি সুব্রত চৌধুরী বলেছেন, বাংলাদেশকে ফতুর করে দিয়েছেন রাবিশ মন্ত্রী’ মুহিত সাহেব।’ তিনি নেতা-কর্মীদের উদ্দেশ্যে বলেন, আপনারা কি রাবিশ মন্ত্রীকে চেনেন? ওই সময় উপস্থিত নেতাকর্মীরা ‘হ্যাঁ’ বলে জবাব দেয়। একইসাথে নেতাকর্মীরা ‘কাউয়া কাউয়া’ বলে স্লোাগান শুরু করে। সুব্রত চৌধুরী আরো বলেন, সিলেটে এই সমাবেশের মধ্যদিয়ে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শুভ সূচনা হলো। সিলেটের পূণ্যভূমি থেকে গণজোয়ার সৃষ্টি হলো। বাংলার ১৬ কোটি মানুষ এই গণজোয়ারের সাথে সম্পৃক্ত হবে।
নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক ও ডাকসুর সাবেক ভিপি সুলতান মোহাম্মদ মনসুর বলেছেন, দেশে নির্বাচন হবে, তবে রেফারি ও খেলার দল একই হলে হবে না। তিনি বলেন, ১০ বছর পর সিলেটে বক্তৃতা দিচ্ছি। আমার রাজনীতি হরণ করার পায়তারা হয়েছিল, কিন্তু পারেনি। ইলিয়াস আলীকে সরণ করে তিনি বলেন, ইলিয়াস আলী এক সময় সিলেট এমসি কলেজে ছাত্রলীগ করতেন। ঢাকায় গিয়ে ছাত্রদলে যোগ দেন। তাকে গুম করা হয়েছে।
তিনি আরো বলেন, সিলেটের মানুষের রেমিটেন্স দেশের অর্থনীতি সমৃদ্ধ করছে। অথচ কোটি কোটি টাকা পাচার হয়ে যাচ্ছে, তারপরও সরকার বলছে এটা কিছুই নয়।
অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতা মোস্তফা মহসিন মন্টু, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ইনাম আহমেদ চৌধুরী, মো. শাহজাহান, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা জয়নুল আবদিন ফারুক, আমান উল্লাহ আমান, বরকত উল্লাহ বুলু, এম এ হক, ইসলামী ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান মাওলানা অ্যাডভোকেট আব্দুর রকিব, জাতীয় পার্টির (কাজী জাফর) মহাসচিব মোস্তফা জামাল হায়দার, এলডিপির মহাসচিব ডা. রেদোয়ান আহমদ, নাগরিক ঐক্যের সমন্বয়কারী শহীদুল্লাহ কায়সার, জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার আহ্বায়ক আ ব ম মোস্তফা আমীন, জেএসডির সহসভাপতি তানিয়া রব, সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মালেক রতন প্রমুখ।
এদিকে, সমাবেশ থেকে ফেরার পথে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা খন্দকার আব্দুল মুক্তাদিরসহ বিএনপির অন্ততঃ ২৫ জন নেতা-কর্মীকে আটক করেছে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী।
ঐদিন সমাবেশ শেষে সিলেট নগরীর উপশহর রোজ ভিউ হোটেলের সামনে থেকে খন্দকার আব্দুল মুক্তাদিরকে আটক করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন সিলেট জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আলী আহমদ। তিনি জানান, জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট আয়োজিত জনসভা থেকে ফেরার পথে তাকে আটক করা হয়। এছাড়া, নগরীর বিভিন্ন এলাকা থেকে বিএনপির আরো অনেক নেতা-কর্মীকেও আটক করা হয়েছে।
এসএমপি কোতোয়ালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. সেলিম মিয়া খন্দকার আব্দুল মুক্তাদির আটকের বিষয়টি নিশ্চিত করেন।

This post has been seen 361 times.