আন্দোলনের মাধ্যমেই ঐক্যফ্রন্টের দাবি আদায় করা হবে : ফখরুল

প্রকাশিত: ৭:৪২ অপরাহ্ণ, নভেম্বর ৯, ২০১৮

আন্দোলনের মাধ্যমেই ঐক্যফ্রন্টের দাবি আদায় করা হবে : ফখরুল

নিউ সিলেট ডেস্ক : বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, আন্দোলনের মাধ্যমেই জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের দাবি আদায় করা হবে। তিনি বলেন, বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তি ছাড়া নির্বাচনের তফসিল গ্রহণযোগ্য হবে না। এখন সংকট আরও কঠিন, আরও ভয়াবহ। আজ শুক্রবার রাজশাহী মাদ্রাসা ময়দানে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সমাবেশে মির্জা ফখরুল এ কথা বলেন।
মির্জা ফখরুল উপস্থিত নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে বলেন, শত বাধা-বিপত্তি উপেক্ষা করে আপনারা উপস্থিত হয়েছেন। পথে পথে বাধা অতিক্রম করে আপনারা গণতন্ত্রের জন্য এসেছেন। এখন সংকট আরও কঠিন, আরও ভয়াবহ। আজকে প্রশ্ন, গণতন্ত্র থাকবে কি থাকবে না। আমাদের কথা বলার অধিকার, ভোট দেওয়ার অধিকার থাকবে কি না, তা প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে।
মির্জা ফখরুল অভিযোগ করেন, দেশনেত্রী খালেদা জিয়াকে এই স্বৈরাচার সরকার আটকে রেখেছে। তিনি অসুস্থ, হাসপাতালে তাঁর চিকিৎসা চলছিল, সেখান থেকে তাঁকে জেলখানায় নেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, ‘গত পাঁচ বছর ধরে গণতন্ত্র রক্ষার জন্য আমরা আন্দোলন করে যাচ্ছি। তারা পুলিশ দিয়ে, বন্দুক-পিস্তল দিয়ে মানুষকে গণতন্ত্রের অধিকার থেকে বঞ্চিত রেখেছে।
বিএনপির মহাসচিব আরো বলেন, আমরা শান্তিপূর্ণভাবে জনগণের মধ্যে ঐক্য গড়ে বাংলাদেশের মুক্তি জন্য লড়াই করছি। সে জন্য আমরা সংলাপে বসেছিলাম। আমরা বলেছিলাম, পার্লামেন্ট ভেঙে দিতে হবে, দেশনেত্রীকে মুক্তি দিতে হবে। কিন্তু তারা তা করেনি।
এদিকে, অসুস্থতার কারণে রাজশাহীর সমাবেশে হাজির হতে পেরে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে বক্তব্যে ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতা ড. কামাল হোসেন প্রধান দলগুলোর মধ্যে সমঝোতার আগে তফসিল ঘোষণা করায় নির্বাচন কমিশনের সমালোচনা করে তিনি বলেন, ‘তড়িঘড়ি’ তফসিল ঘোষণার এই প্রক্রিয়া ‘গণতান্ত্রের বিরুদ্ধে’।
কষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতা আব্দুল কাদের সিদ্দিকী বীর উত্তম বলেছেন, আজকের জনসভায় বিএনপির যে পরিমাণ নারী কর্মীর উপস্থিতি রয়েছে, তা যদি আমার দলে থাকতো তাহলে তিন দিনের মধ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পতন ঘটিয়ে ফেলতাম।
তিনি আরো বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানকে নিয়ে যারা নোংরা রাজনীতি লালন করছে- অদূর ভবিষ্যতে তাদের বিচার করা হবে।
রাজাকারের গাড়িতে জাতীয় পতাকা দেয়ার বিষয়ে মুক্তিযুদ্ধের কাদেরিয়া বাহিনীর প্রধান কাদের সিদ্দিকী বলেন, খালেদা জিয়া প্রথম পতাকা দেয় নাই, প্রথম পতাকা দিয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
জেএসডির সভাপতি আ স ম আবদুর রব বলেন, ‘আমরা নির্বাচনে যেতে চাই, আমাদের উসকানি দেবেন না। ৭ দফা না মানলে দেশে নির্বাচন হবে না।
ঐক্যফ্রন্টের সমাবেশে এই প্রথম যোগ দিলেন এলডিপির সভাপতি কর্নেল (অব.) অলি আহমেদ। তিনি বলেন, খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে রাজপথে আন্দোলনের বিকল্প নেই।
ব্যারিস্টার মওদুদ বলেন, সংলাপে প্রধানমন্ত্রী তার দেওয়া কথা রাখেননি। কথা দেওয়ার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তিনি তার কথা বরখেলাপ করেছেন। এবার বিনা চ্যালেঞ্জে সরকারকে ছেড়ে দেওয়া হবে না বলে জানিয়েছেন ব্যারিস্টার মওদুদ বলেন, এবার ৫ জানুয়ারির মতো নির্বাচন হতে দেওয়া হবে না। এবারের জনজোয়ারে আগামী নির্বাচনে নৌকা ভেসে যাবে।
তিনি বলেন, সিইসি সরকারের তল্পিবাহক ও অকার্যকর। বর্তমান সরকার যতদিন ক্ষমতায় থাকবে ততদিন ইসি স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারবে না। বেগম জিয়ার মুক্তি না হওয়া পর্যন্ত ঐক্যফ্রন্টের আন্দোলন চলবে। নেতাকর্মীদের আন্দোলনের প্রস্তুতি নিতে আহ্বান জানান তিনি। ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, অলিখিত বাকশাল কায়েম করতে সরকার দেশের সব সাংবিধানিক কাঠামো ধ্বংস করে দিয়েছে। প্রশাসনের সব স্তরে দলীয়করণ করেছে। তিনি বলেন, বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে ছাড়া দেশে কোনো অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন হবে না, হতে দেওয়া হবে না। খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিয়ে তারপর নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন ব্যবস্থা করতে হবে। অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের দাবি আদায়ের আন্দোলনে নেতাকর্মীদের প্রস্তুত থাকার আহ্বান জানান তিনি।
সরকারকে হুঁশিয়ার করে দিয়ে নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, এক মাঘে শীত যায় না। এটি ভুলে গেলে চলবে না। বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে যদি এক শীত কারাগারে কাটাতে হয়, শেখ হাসিনাকে ১০ শীত কাটাতে হবে।
মান্না বলেন, নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার করে, একতরফা নির্বাচনী বৈতরণী পার করা সম্ভব নয়। ঐক্যফ্রন্ট নির্বাচন বানচাল করতে চায় না। ৭ দফা দাবি মেনে না নেওয়া পর্যন্ত দেশে কোনো নির্বাচন হবে না। প্রতিহিংসা বন্ধ করে সুষ্ঠু নির্বাচন দিতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক বলেন, ঐক্যফ্রন্ট যাতে নির্বাচনে অংশ নিতে না পারে সরকার সে ফাঁদ পেতেছে। আমরা আবারো নির্বাচন কমিশনের কাছে আহ্বান জানাই তফসিল পেছানোর। আমাদের দাবি না মানলে কোনো নির্বাচন নয়।
উপস্থিত নেতাকর্মী ও সমর্থকদের উদ্দেশে মান্না বলেন, ঢাকায় আসেন, দেখি ওরা আমাদের কথা শুনে কিনা। আমরা আলোচনা করে সমাধানের প্রস্তাব দিয়েছি। কিন্তু সরকার সেগুলো বাস্তবায়ন করেনি। কিন্তু এরই মাঝে নির্বাচন কমিশন তফসিল ঘোষণা করেছে।
জনসভায় গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক মোস্তাফা মোহসীন মন্টু বলেন, দেশকে একটি সংঘাতের দিকে ঠেলে দিতে না চাইলে ৭ দফা মেনে নিয়ে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন দিন।
সরকারের উদ্দেশে মন্টু বলেন, আমরা যে দাবিগুলো দিয়েছি, সেগুলো মেনে নিন। আমাদের দাবিগুলো জনগণের দাবি। সেগুলো মেনে নিয়ে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের ব্যবস্থা করুন।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেছেন, ‘হুদার অধীনে নির্বাচনে গেলে, শেখ হাসিনার অধীনে নির্বাচনে গেলে, শেখ হাসিনা আজীবন প্রধানমন্ত্রী থাকবেন। আর খালেদা জিয়া আমৃত্যু কারাগারে এবং তারেক জিয়া আজীবন নির্বাসনে থাকবেন। আমরা যদি সিদ্ধান্ত নিতে ভুল করি, এ দেশের মানুষ আমাকে, আপনাকে ছাড়বে না। তাই বলছি, হুদাকে নামান, শেখ হাসিনাকে নামান। আমরা নির্বাচনে গেলে জয়ী হব যদি ভোট দিতে পারি।
জনসভায় গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, সরকারের ভীত নড়ে গেছে। তারা পালাবার পথ খুঁজছে। সরকার যত প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করুক না কেন, ভোট প্রয়োগের মাধ্যমে তাদের পরাজিত করতে হবে। জনগণের বিজয় সুনিশ্চিত।
তিনি বলেন, জনগণের বিপক্ষে গিয়ে কেউ কখনো বেশি দিন টিকে থাকতে পারেনি। বর্তমান ক্ষমতাসীনরাও পারবে না।
ডাকসুর সাবেক ভিপি আমানউল্লাহ আমান বলেন, শেখ হাসিনার বিচার চাই, খালেদা জিয়াকে কারাগারে রেখে শেখ হাসিনা বাইরে থাকতে পারেন না। শেখ হাসিনাকেও জেলে যেতে হবে।
জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের রাজশাহী বিভাগীয় সমন্বয়ক ও বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মিজানুর রহমান মিনু’র সভাপতিত্বে আরো বক্তব্য রাখেন, অ্যাডভোকেট জগলুল হায়দার আফ্রিক, শহীদুল্লাহ কায়সার, আবদুল গোফরান, শাহজাহান মিয়া, আবদুর রউফ ইউছুপ, আবদুস সালাম, হাবিবুর রহমান হাবিব, মোস্তাফিজুর রহমান ইরান, হারুনুর রশিদ, নাদিম মাহমুদ, রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু, শাহ আহমদ বাদল, মোস্তাক আহমেদ, এ টি এম গোলাম, শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানি, রফিকুল ইসলাম, সৈয়দা আসিফা আশরাফী পাপিয়া প্রমুখ।
এর আগে দুপুর ২টায় পবিত্র কোরআন তিলাওয়াতের মাধ্যমে জনসভা শুরু হয়।
এদিকে, সমাবেশ চলাকালে রাজশাহী সিটি করপোরেশনের মেয়র ও মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন নগরীর সাহেববাজারে নেতাকর্মীদের নিয়ে অবস্থান করেন। নগরীতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সতর্ক অবস্থানে ছিল।
সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনসহ সাত দফা দাবি আদায়ে নবগঠিত জোট জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের রাজশাহীতে এটি চতুর্থ সমাবেশ।



This post has been seen 336 times.

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

সর্বশেষ শিরোনাম

অনুসন্ধান ক্যালেন্ডার

শনি রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র
 
১০
১১১২১৩১৪১৫১৬১৭
১৮১৯২০২১২২২৩২৪
২৫২৬২৭২৮২৯৩০৩১