কলঙ্কময় জেলহত্যা দিবস আজ

প্রকাশিত: ৯:৪৯ পূর্বাহ্ণ, নভেম্বর ৩, ২০২০

কলঙ্কময় জেলহত্যা দিবস আজ

নিউ সিলেট ডেস্ক : বাঙালি জাতির কলঙ্কময় আজ ৩ নভেম্বর। ১৯৭৫ সালের এই দিনে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে একদল দুষ্কৃতকারী হত্যা করে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের রাজনৈতিক সহযোদ্ধা এবং মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী জাতীয় চার নেতা সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দিন আহমদ, এম মনসুর আলী ও এ এইচ এম কামারুজ্জামানকে।
১৯৭৫ এর ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর গঠিত মন্ত্রিসভায় যোগদানের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছিলেন এই চার নেতা। যার কারণে তখনকার শাসক বিশ্বাসঘাতক খন্দকার মোশতাক আহমদ তাদেরকে গ্রেফতার করে কারাগারে বন্দি করে। একপর্যায়ে ঘাতকরা কারাগারের ভেতরে গিয়ে জাতীয় চার নেতাকে একত্র করে গুলি চালিয়ে এবং বেয়নেট দিয়ে খুঁচিয়ে হত্যা করে। হত্যার পরদিন তৎকালীন উপ-কারা মহাপরিদর্শক (ডিআইজি প্রিজন) কাজী আবদুল আউয়াল লালবাগ থানায় একটি হত্যা মামলা করেন। তবে দীর্ঘ ২১ বছর এই বিচারের প্রক্রিয়া ধামাচাপা দিয়ে রাখা হয়। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে মামলাটি পুনরুজ্জীবিত করার প্রক্রিয়া শুরু করে।
১৯৯৮ সালের ১৫ অক্টোবর ২৩ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ। ২০০৪ সালের ২০ অক্টোবর ঢাকা মহানগর দায়রা জজ মো. মতিউর রহমান মামলার রায় দেন। রায়ে তিনজনকে মৃত্যুদণ্ড এবং ১২ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়া হয়। মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন- রিসালদার মোসলেম উদ্দিন, দফাদার মারফত আলী শাহ ও দফাদার আবুল হাশেম মৃধা। যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন- খন্দকার আবদুর রশিদ, শরিফুল হক ডালিম, এম এইচ এম বি নূর চৌধুরী, এ এম রাশেদ চৌধুরী, আবদুল মাজেদ, আহমদ শরিফুল হোসেন, কিসমত হোসেন, নাজমুল হোসেন আনসার, সৈয়দ ফারুক রহমান, শাহরিয়ার রশিদ, বজলুল হুদা ও এ কে এম মহিউদ্দিন।
মামলায় সাবেক মন্ত্রী কে এম ওবায়দুর রহমান, শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন, নুরুল ইসলাম মঞ্জুর ও তাহেরউদ্দিন ঠাকুরকে খালাস দেয়া হয়। ২০০৮ সালে হাইকোর্ট রিসালদার মোসলেম উদ্দিনের মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখলেও মৃত্যুদণ্ড পাওয়া অন্য দুই আসামি মারফত আলী ও হাশেম মৃধাকে খালাস দেন। এছাড়া, যাবজ্জীবন কারাদণ্ড পাওয়া ফারুক, শাহরিয়ার রশিদ, বজলুল হুদা ও এ কে এম মহিউদ্দিন আহমেদকেও খালাস দেয়া হয়। কিন্তু রাষ্ট্রপক্ষ হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করলে ২০১৩ সালের ১৫ এপ্রিল সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ রায়ে ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের দেয়া তিনজনের মৃত্যুদণ্ড এবং ১২ জনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড বহাল রাখেন। তাদের মধ্যে জাতির জনকের হত্যা মামলায় ২০১০ সালের ২৭ জানুয়ারি মধ্যরাতে সৈয়দ ফারুক রহমান, শাহরিয়ার রশীদ খান, বজলুল হুদা ও এ কে এম মহিউদ্দিনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়।
এখনও জেলহত্যা মামলার ১০ জন আসামি পলাতক। তারা হলেন- মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত মোসলেম উদ্দিন, আপিল বিভাগের রায়ে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত মারফত আলী শাহ ও আবুল হাসেম মৃধা, যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত খন্দকার আবদুর রশিদ, শরিফুল হক ডালিম, এম এইচ এম বি নূর চৌধুরী, এ এম রাশেদ চৌধুরী, আহমদ শরিফুল হোসেন, কিসমত হোসেন ও নাজমুল হোসেন আনসার। যাবজ্জীবন দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি আবদুল মাজেদ দেশের বাইরে মারা গেছেন বলে জানা গেছে।
তবে জেলহত্যা দিবস উপলক্ষে প্রতিবারের ন্যায় এবারও ক্ষমতাশীল আওয়ামী লীগ বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। তবে, বৈশ্বিক মহামারি করোনাভাইরাস সংক্রমণ রোধে জেলহত্যা দিবসে সীমিত পরিসরে নানা কর্মসূচি পালিত হবে। এর মধ্যে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সদস্যরা, ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক এবং সহযোগী সংগঠনের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকরা স্বাস্থ্য সুরক্ষাবিধি মেনে উপস্থিত থাকবেন।
দলটির দফতর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে দলীয় কর্মসূচির বিষয়ে জানানো হয়েছে। কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে- সূর্য উদয়ক্ষণে বঙ্গবন্ধু ভবন এবং কেন্দ্রীয় কার্যালয়সহ সারাদেশে সংগঠনের সকল স্তরের কার্যালয়ে জাতীয় ও দলীয় পতাকা অর্ধনমিতকরণ এবং কালো পতাকা উত্তোলন। সকাল ৮টায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্মৃতিবিজড়িত ধানমন্ডিস্থ ঐতিহাসিক বঙ্গবন্ধু ভবন প্রাঙ্গণে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ। এছাড়া, সকাল ৮টা ৪৫ মিনিটে বনানী কবরস্থানে ১৫ আগস্টের কালরাতে নিহত সকল শহীদ ও কারাগারে নির্মমভাবে নিহত জাতীয় নেতাদের সমাধিতে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ, ফাতেহা পাঠ, মিলাদ মাহফিল ও মোনাজাত।
রাজশাহীতে জাতীয় নেতা শহীদ কামারুজ্জামানের কবরে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ, ফাতেহা পাঠ, মিলাদ ও মোনাজাত। বিকাল সাড়ে ৩টায় আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আলোচনা সভা, এতে ভার্চুয়ালি যোগ দেবেন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।



This post has been seen 415 times.

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

সর্বশেষ শিরোনাম

অনুসন্ধান ক্যালেন্ডার

শনি রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র
 
১০
১১১২১৩১৪১৫১৬১৭
১৮১৯২০২১২২২৩২৪
২৫২৬২৭২৮২৯৩০৩১