সিলেট ২৩শে জানুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৯ই মাঘ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ২৩শে রজব, ১৪৪৬ হিজরি
প্রকাশিত: ৯:০৯ অপরাহ্ণ, আগস্ট ৩১, ২০২২
নিউ সিলেট ডেস্ক : প্রধানমন্ত্রী ও আ’লীগের সভানেত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আমাদের পেছনে তো লোক লেগেই আছে। আমি জানি ছাত্রলীগ সম্পর্কে অনেক কথা লেখা হয়। আমাদের এত বড় একটা সংগঠন, আমরা ক্ষমতায় আছি বলে অনেকেই এর ভেতরে ঢুকে যায়। ঢুকে নিজেরাই গোলমাল করে, বদনামটা ছাত্রলীগের ওপর পড়ে। ছাত্রদল যত অপকর্ম করে গেছে সেটা নিয়ে কথা নেই, কিন্তু ছাত্রলীগের একটু হলেই বড় নিউজ। তিনি বলেন, ছাত্রলীগের গ্রুপ বাড়ানোর জন্য এই রকম আলতুফালতু লোক দলে ঢুকাবে না। এতে নিজের বদনাম, দলের বদনাম, দেশের বদনাম। এ ক্ষেত্রে নিজেদের ঠিক থাকতে হবে। আজ বুধবার বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ আয়োজিত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব স্মরণে আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন।
শেখ হাসিনা বলেন, ৭৫ এর পরে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছিল অস্ত্রের ঝনঝনানি, বোমাবাজি। আমরা সেখান থেকে ঘুরিয়ে এনেছি। শিক্ষার বিভিন্ন পরিবর্তন এনে আধুনিকায়ন করেছি। প্রতি জেলায় বিশ্ববিদ্যালয়, প্রতি উপজেলায় স্কুল সরকারি করে দিচ্ছি। শিক্ষার ক্ষেত্রে বৃত্তি, উপবৃত্তি দিচ্ছি, উচ্চশিক্ষার জন্য আলাদা ট্রাস্ট ফান্ড করেছি। আমাদের স্বাক্ষরতার হার ৪৫ শতাংশ থেকে ৭৫ শতাংশ করেছি।
এসময় বিএনপির সমালোচনা করে বলেন, খালেদা জিয়া বলেছিল ছাত্রদল দিয়েই নাকি আওয়ামী লীগকে সোজা করবে। তাদের হাতে যে অস্ত্র, এটা তো জিয়াউর রহমান শুরু করেছিল মেধাবী ছাত্রদের হাতে অস্ত্র তুলে দেওয়া। আমি ছাত্রলীগের হাতে বই-খাতা-কলম তুলে দিলাম, আগে লেখাপড়া শিখতে হবে। কারণ শিক্ষা ছাড়া কোনো জাতিকে কেউ সেবা দিতে পারে না। যেকোনো সংগ্রাম আন্দোলনে অগ্রগামী দল হিসেবে ছাত্রলীগই সব সময় বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করেছে।
১৫ আগস্ট শাহাদত বরণকারী সবাইকে শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন,
সেদিন আমি শুধু স্বজন হারিয়েছি তা নয়, বাংলার মানুষ হারিয়েছিল তাদের ভবিষ্যৎ জীবনের সকল সম্ভাবনাকে, তাদের বেঁচে থাকার সকল উপকরণ, মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ-চেতনা, ৭১ সালের বিজয়ের গর্ব। পরে সংবিধান লঙ্ঘন করে তারা ক্ষমতায় এসেছিল। যাদেরকে হত্যা করেছিল তাদের নামে বিভিন্ন অপপ্রচার চালিয়ে জনগণের কাছে হেয় প্রতিপন্ন করা চেষ্টা করেছিল। লাখো শহীদের আত্মত্যাগে অর্জিত আমাদের স্বাধীনতা। সেই শহীদদের আত্মত্যাগকে তারা অস্বীকারই শুধু করেনি, যারা মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর সঙ্গে হাত মিলিয়ে এ দেশে গণহত্যা চালিয়েছিল, লুটপাট করেছিল, আমাদের মেয়েদের ধরে নিয়ে পাকিস্তানি ক্যাম্পে দিয়ে তাদের ওপর পাশবিক অত্যাচার করেছিল। অপর দিকে জাতির পিতার হত্যাকারীদের বিচার না করে ইনডেমনিটি দিয়ে বিভিন্ন দূতাবাসে চাকরি দিয়ে পুরস্কৃত করেছিল, সেই ঘাতকের দলই তো ক্ষমতায় ছিল।
বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের কথা স্মরণ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সংসারের কোনো ব্যাপারে আমার মা আমার বাবাকে বিরক্ত করেননি। তিনি বাবাকে বলতেন, তুমি দেশের জন্য কাজ করো, জনগণের জন্য কাজ করো, আমি সংসার দেখি। কিন্তু মা শুধু সংসার দেখতেন না, সংগঠনের দিকেও নজর দিতেন। আব্বা যখন জেলে, তখন সংগঠনের নেতারা কে কোথায় আছে; নেতারা যখন জেলে, তখন তাদের পরিবার কী অবস্থায় আছে সেদিকে নজর রাখতেন। আমাদের অনেক বড় বড় নেতা, এমনকি ১৫ আগস্টে যিনি সবচেয়ে বড় বেইমানি করলেন, তার স্ত্রীর হাতে আমার মা মাসিক বাজারের টাকাটা তুলে দিয়ে আসতেন। বাড়ি থেকে চাল-ডাল যা আসত, তার ভাগ দিতেন। ৩২ নম্বরে দলের মিটিং হবে বললে, মা সমস্ত কিছুর আয়োজন করতেন। নিজের হাতে রান্না করতেন।
৩২ নম্বরের বাড়ির স্মৃতিচারণ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সংসারের কি কি দরকার তা মা নিজে ব্যবস্থা করতেন। তিনি গরু পালতেন, ছাগল পালতেন, মুরগি, হাঁস, কবুতর এবং সবজি, সব ওই বাড়িতে উৎপাদন করাতেন। যাতে বাজারে বেশি খরচ করাতে না হয়। এর পাশাপাশি তার যে রাজনৈতিক চেতনা, সেটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আব্বা জেলে থাকলে ছাত্রলীগ সংগঠিত করা, বা আন্দোলন-সংগ্রাম চালানো, পাশাপাশি আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে পরামর্শ তিনি করতেন।
১৫ আগস্টের কথা স্মরণ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আব্বা দেখলেন, সেই চেনামুখগুলো এসেছে ঘাতকের বেশে। তখন ওনার ভেতরে কী হচ্ছিল আমি জানি না। কিন্তু আমার মা-কে এসে তারা যখন বলল, আপনি চলেন আমাদের সঙ্গে; আমার মা কিন্তু তাদের কাছে জীবন ভিক্ষা চায়নি। তিনি বলেছিলেন, আমি তোমাদের সঙ্গে কোথাও যাব না। তিনি ঘাতকদের চ্যালেঞ্জ দিয়ে বলেছেন, “তোমরা আমাকেও শেষ করে দাও। তোমরা ওনাকে কেন মারলে?” এই প্রশ্নের জবাব তারা দিয়েছিল বুলেট দিয়ে। সঙ্গে সঙ্গে গুলি করে দিলো তাকে। এরপরই রুমে ঢুকে কামাল, জামাল, তাদের স্ত্রী সবাইকে মারলো, রাসেলকে নিয়ে গেল নিচে। মায়ের লাশ, ভাইয়ের লাশ, বাবার লাশ পেরিয়ে ও যখন চিৎকার করে কাঁদছে মায়ের কাছে যাওয়ার জন্য, তখন তারা বলল, চল মায়ের কাছে নিয়ে যাচ্ছি। তুলে নিয়ে ওই ঘরেই তাকে গুলি কর হত্যা করল।’
জিয়াউর রহমানের সমালোচনা করেন তিনি বলেন, ৬ বছর দেশে আসতে পারিনি। জিয়াউর রহমান আমাকে আসতে বাধা দিয়েছে। যখন আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত হলাম, ফিরে এলাম, তখনও কিন্তু আমাকে ৩২ নম্বরের বাড়িতে ঢুকতে দেয়নি। আমি যে মিলাদ পড়ব, সেটার সুযোগ জিয়াউর রহমান আমাকে দেয়নি।
নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ‘পরিকল্পনা করে দিয়ে যাচ্ছি আমি ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ কেমন হবে, ২১০০ সালের ডেলটা প্লান প্রণয়ন করে দিয়েছি। যারা আগামীতে আসবে তারা এগুলো অনুসরণ করলে বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা কেউ থামাতে পারবে না।
করোনাকালে ছাত্রলীগের কার্যক্রমের প্রশংসা করে তিনি বলেন, সবচেয়ে বেশি যেটা দরকার, লেখাপড়া শিখতে হবে। ডিজিটাল বাংলাদেশ করে দিয়েছি, আধুনিক জ্ঞানসম্পন্ন দক্ষ জনশক্তি চাই। কারণ চতুর্থ শিল্প বিপ্লব আসবে, তার উপযুক্ত নাগরিক হিসেবে প্রজন্ম তাদের প্রস্তুত করবে। দেশ চালাতে গেলে শিক্ষার প্রয়োজন আছে, শিক্ষার প্রয়োজন আছে। দূরদৃষ্টিসম্পন্ন হতে হবে। এই করোনার কারণেই বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক মন্দা। উন্নত দেশগুলোও হিমশিম খাচ্ছে। সব ছাত্র-ছাত্রীদের আমি বলব, সবাইকে সাশ্রয়ী হতে হবে। বিদ্যুতের সীমিত ব্যবহার করতে হবে, প্রয়োজন না হলে সুইচ বন্ধ রাখতে হবে। পানি ব্যবহারে মিতব্যয়ী হতে হবে। কল ছেড়ে রেখে বা ঝর্ণা ছেড়ে রেখে গোসল করলে চলবে না। সবাইকে বালতি কিনে মগে করে পানি ব্যবহার করতে হবে। যাতে করে এক ফোঁটা পানির অপচয় না হয়।
তিনি আরও বলেন, পানির জন্য উন্নত দেশগুলোতে হাহাকার। লন্ডনে বলে দিয়েছে, গোসল করতে পারবা না রোজ। গাছে পানি দিলে বালতি নিয়ে মগে করে দিতে হবে, গাড়ি ধুতে পারবা না। সেখানে যখন এই অবস্থা, আমাদের আগে থেকে সতর্ক থাকতে হবে সেই অবস্থায় যেন পড়তে না হয়। ওদের রেশন করে দেওয়া কে কতটুকু কিনতে পারবে। দোকান থেকে ১ লিটারের বেশি তেল কিনতে পারবে না। সব কিছু সীমিত করে দিয়েছে। আমেরিকা, ইংল্যান্ড, ইউরোপ— ভয়াবহ অবস্থা অর্থনীতির। আমরা যদি আগে থেকে সাবধানে থাকি, সেই অবস্থাটা সামাল দিতে পারব।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, অহেতুক ঘোরাঘুরি করার দরকার নেই। পায়ে হাঁটলে স্বাস্থ্য ভালো হয়, এক্সারসাইজও হয়। আর হাঁটাও ভালো। এভাবে সবাইকে সাশ্রয়ী হতে হবে। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার আহ্বান জানিয়ে তিনি সবাইকে নিজ নিজ অবস্থানে চাষবাস করে উৎপাদন বাড়াতে আহবান জানান। কারণ হিসেবে তিনি বলেন, বিশ্বে আরও ভয়াবহ অবস্থা হবে, পয়সা দিয়েও খাবার কেনা যাবে না।
শনি | রবি | সোম | মঙ্গল | বুধ | বৃহ | শুক্র |
---|---|---|---|---|---|---|
১ | ২ | ৩ | ||||
৪ | ৫ | ৬ | ৭ | ৮ | ৯ | ১০ |
১১ | ১২ | ১৩ | ১৪ | ১৫ | ১৬ | ১৭ |
১৮ | ১৯ | ২০ | ২১ | ২২ | ২৩ | ২৪ |
২৫ | ২৬ | ২৭ | ২৮ | ২৯ | ৩০ | ৩১ |
EDITOR & PUBLISHER:
JUMAN AHMED
OFFICE : 4/4 SURMA MARKET
SYLHET
EMAIL:newsylhet2016@gmail.com
WEB:www.sylheterkhobor.com
MOB:01712-298815
Design and developed by ওয়েব হোম বিডি