জাবিতে ‘আত্মীয় কোটায়’ নিয়োগের হিড়িক

প্রকাশিত: ১২:৪৮ অপরাহ্ণ, অক্টোবর ২৫, ২০১৬

জাবিতে ‘আত্মীয় কোটায়’ নিয়োগের হিড়িক

নিউ সিলেট ডেস্ক:::  জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) শিক্ষক ও কর্মকর্তা পদে ‘আত্মীয় কোটায়’ নিয়োগের হিড়িক পড়েছে। কোনো ধরনের বিজ্ঞপ্তি না দিয়েই শিক্ষক ও কর্মকর্তাদের আত্মীয়দের কয়েক দফায় বেশ কয়েকটি পদে অ্যাডহক ভিত্তিতে নিয়োগ দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে। বিজ্ঞপ্তি ছাড়া ও স্বজনপ্রীতি করে একের পর এক কর্মকর্তা নিয়োগ দেওয়ার কারণে ক্ষোভ বিরাজ করছে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মাঝে।
সম্প্রতি পূজার ছুটির আগে ও পরে দুই দফায় বিশ্ববিদ্যালয়ের তিন শিক্ষকের স্ত্রীসহ চারজনকে বিভিন্ন কার্যালয়ে বিজ্ঞপ্তি ছাড়া নিজ ক্ষমতাবলে নিয়োগ দিয়েছেন উপাচার্য অধ্যাপক ড. ফারজান ইসলাম।
নিয়োগপ্রাপ্তদের মধ্যে রয়েছেন বাংলা বিভাগের সভাপতি ও শহীদ রফিক-জব্বার হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক এএসএম আবু দায়েনের স্ত্রী আফরোজা রেশমা। তাকে প্রশাসনিক ভবনের শিক্ষা শাখায় প্রশাসনিক কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। একই বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক, সিন্ডিকেট সদস্য ও মওলানা ভাসানী হলের প্রাধ্যক্ষ নাজমুল হাসান তালুকদারের স্ত্রী নুজহাত নুয়েরীকে বিশ্ববিদ্যালয় স্কুল ও কলেজের কলেজ শাখায় বাংলা বিভাগে প্রভাষক পদে; নৃবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মোহাম্মদ নাসির উদ্দিনের স্ত্রী নাজমা আকতারকে কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারে প্রশাসনিক কর্মকর্তার পদে, প্রোভিসি অধ্যাপক আবুল হোসেনের আত্মীয় রিফাত জেরিনকে ছাত্রকল্যাণ ও পরামর্শদান কেন্দ্রে কর্মকর্তা পদে।
এর আগে গত ১৩ জুলাই দুই কর্মকর্তার ৪ আত্মীয়কে বিজ্ঞপ্তি ছাড়া নিজ ক্ষমতাবলে নিয়োগ দেন উপাচার্য। তারা হলেন, ভিসির একান্ত সচিব মো. ছানোয়ার হোসেনের স্ত্রী তাসনিমা খন্দকারকে ছাত্রকল্যাণ ও পরামর্শদান কেন্দ্রের ক্যারিয়ার গাইডেন্স পদে এবং তার বোন ইয়াসমিন আক্তারকে শেখ হাসিনা হলের অ্যাটেনডেন্ট পদে; উপাচার্যের কার্যালয়ের সিনিয়র স্টাফ সিদ্দিকুর রহমানের ছেলে আবু হানিফকে পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকের কার্যালয়ের প্রশাসনিক কর্মকর্তা ও তার মেয়ে সালমাকে কমনরুম অ্যাটেনডেন্ট পদে নিয়োগ দেওয়া হয়।
এছাড়া অ্যাডহক ভিত্তিতে শাখা ছাত্রলীগের ছয় বিতর্কিত নেতাকে অফিসার পদে নিজ ক্ষমতাবলে নিয়োগ দিয়েছিলেন উপাচার্য।
এরা হলেন ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি হাসিনুর রহমান শামীম, রাজিব চক্রবর্তী, রাসেল মিয়া স্বাধীন, খন্দকার এএসএম জিন্নাহ, সাংগঠনিক সম্পাদক ফয়সাল হোসেন দীপু ও গণশিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক সোহেল রানা। পরে শিক্ষকদের আন্দোলনের মুখে ফয়সাল হোসেন দীপুর নিয়োগ বাতিল করা হলেও বাকিদের নিয়োগ দেওয়া হয়।
এছাড়াও স্বজনপ্রীতি করে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণ রসায়ন ও অনুপ্রাণ বিজ্ঞান বিভাগে ‘অযোগ্য’ ৬ শিক্ষক নিয়োগ দেওয়ার অভিযোগ আছে উপাচার্যের বিরুদ্ধে। বিভাগের ২৩ জন শিক্ষকের মধ্যে ১৭ জনই ওই নিয়োগের  বিরোধিতা করেছিলেন।
ওই সময় শিক্ষক হিসেবে নিয়োগপ্রাপ্তরা হলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টর সেলিনা আক্তারের স্বামী ও সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক শরীফ এনামুল কবিরের ভাগ্নে কাজী রাসেল, সহকারী প্রক্টর মাহমুদুল হাসানের স্ত্রী আফরোজা পারভীন, পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক আবদুল মান্নান চৌধুরীর ভাগ্নে মোজাম্মেল হক, প্রাণরসায়ন ও অনুপ্রাণ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. এসএম বদিয়ার রহমানের ঘনিষ্ঠ সুব্রত বণিক এবং তার অধীনে গবেষণাকর্ম করা ছাত্র মো. মাহফুজ আলী।
কোনো ধরনের বিজ্ঞপ্তি ছাড়া বিভিন্ন অভিযোগে অভিযুক্ত ছাত্রলীগ নেতাদের এবং দুই কর্মকর্তা-কর্মচারীর আত্মীয়কে নিজ ক্ষমতাবলে নিয়োগের পর শিক্ষকদের চাপে উপাচার্য অধ্যাপক ড. ফারজানা ইসলাম বিজ্ঞপ্তি ছাড়া ভবিষ্যতে আর নিয়োগ হবে না বলে ঘোষণা দিয়েছিলেন।
এরপরও বিজ্ঞপ্তি ছাড়া নিয়োগ বিষয়ে উপাচার্যের ভাষ্য, জামাত-শিবির এড়াতেই এভাবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। যোগ্যদেরকেই নেওয়া হয়েছে বলে দাবি করে উপাচার্য অধ্যাপক ফারজানা ইসলাম বলেন, ‘অনেকগুলো পদ খালি হয়েছে। তাই প্রয়োজনবোধেই এসব নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। তাছাড়া পরিচিতদের মধ্য থেকে নিয়োগ দেওয়ার বড় কারণ ছিল জামাত-শিবির এড়ানো।’
এদিকে প্রশাসনের সমালোচক শিক্ষকরা মনে করছেন ভিসি এখন খোঁড়া অজুহাত দেখিয়ে এ অবৈধ নিয়োগের বৈধতা খুঁজছেন। তারা মনে করেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে এখন এমন কোনো জরুরি অবস্থা নেই যে অ্যাডহক ভিত্তিতে নিয়োগ দিতে হবে।
এ ব্যাপারে সরকার ও রাজনীতি বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক নাসিম আখতার হোসাইন বলেন, ‘এটা এক ধরনের চাকরি সংশ্লিষ্ট লেনদেন এবং এক ধরনের ভাগ-ভাটোয়ারা। সুবিধা বন্টনের জন্যই এ ধরনের উদ্দেশ্যমূলক নিয়োগ। এটা পুরোটাই লেনদেন এবং স্বার্থ সংশ্লিষ্ট।’
ভিসির জামাত-শিবির এড়ানোর যুক্তি সম্পর্কে এ অধ্যাপক আরো বলেন, ‘বিভিন্ন সময় প্রশাসনই আওয়ামী লীগের ব্যানারে জামাত-শিবিরের লোকদের নিয়োগ দিয়েছে। আমরা সেটা জানি। তাছাড়া প্রশাসনতো আইনত এমন কথা বলতেই পারেন না। রাজনৈতিক পরিচয় দিয়ে নিয়োগের জন্য প্রার্থী হতে হবে সরকারের কোনো আদেশে এমন কোনো কথা আছে নাকি! এসব কথার কোনো ভিত্তি নাই।’
শিক্ষক সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক মো. শরিফ উদ্দিন বলেন, ‘একটি বিশেষ এজেন্ডা নিয়ে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়কে আত্মীয়-স্বজনের পুনর্বাসন কেন্দ্রে পরিণত করা হচ্ছে। যোগ্যদের আবেদন করার সুযোগ না দিয়ে এ রকম অযোগ্যদেরকে বিশেষ কোটায় নিয়োগ দিলে বিশ্ববিদ্যালয় ভবিষ্যতে মেধাশূন্য হয়ে পড়বে।’



This post has been seen 454 times.

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

সর্বশেষ শিরোনাম

অনুসন্ধান ক্যালেন্ডার

শনি রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র
 
১০
১১১২১৩১৪১৫১৬১৭
১৮১৯২০২১২২২৩২৪
২৫২৬২৭২৮২৯৩০৩১