আগামী নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আলাদা হচ্ছে দল ও সরকার

প্রকাশিত: ১১:৩১ পূর্বাহ্ণ, অক্টোবর ৩০, ২০১৬

আগামী নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আলাদা হচ্ছে দল ও সরকার

নিউ সিলেট ডেস্ক:::   জাতীয় সম্মেলনের মাধ্যমে দলের নতুন নেতৃত্ব নির্বাচন করেছে আওয়ামী লীগ। আগামী নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দলে গতিশীলতা আনতে মন্ত্রীদের দলীয় পদ-পদবিতে তেমন একটা রাখা হয়নি। নেতারা বলছেন, এ সম্মেলনের মাধ্যমে সরকারের দায়িত্বে থাকা মন্ত্রীদের প্রভাব কমানো হয়েছে। এভাবে পর্যায়ক্রমে দল ও সরকার আলাদা করতে চাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
৮১ সদস্য বিশিষ্ট কমিটির ৭৪ জন দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতার নাম ইতোমধ্যে ঘোষণা করা হয়েছে। সম্মেলনের দ্বিতীয় দিন কাউন্সিলরদের ভোটে সভাপতি নির্বাচিত হন শেখ হাসিনা ও সাধারণ সম্পাদক হন ওবায়দুল কাদের। এরপর সভাপতিমণ্ডলীর ১৪ জন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক চারজন এবং কোষাধ্যক্ষের নাম ঘোষণা করে কাউন্সিলরদের ভোটে পাস করে নেয়া হয়। কাউন্সিলের পর সম্পাদকমণ্ডলী এবং কার্যনির্বাহী সদস্যদের নাম ঘোষণা করা হয়। নতুন কমিটিতে বাদ পড়েছেন জাতীয় সংসদের ডেপুটি স্পিকার ও বেশ কয়েকজন মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী। আওয়ামী লীগের ৭৪ জন সদস্যের তথ্য বিশ্লেষণ করে পাওয়া যায়, তাদের মধ্যে সরকারে দায়িত্ব পালন করছেন ১০ জন। যা আগের কমিটির তুলনায় অর্ধেকেরও কম।
নবগঠিত কমিটিতে প্রধানমন্ত্রীসহ ১০ জন মন্ত্রী রয়েছেন। তারা হচ্ছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী, স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম, গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, জনপ্রশাসনমন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম, শিক্ষামন্ত্রী নূরুল ইসলাম নাহিদ, সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, কেন্দ্রীয় সদস্য ও ত্রাণমন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া, খাদ্যমন্ত্রী অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম এবং বস্ত্র ও পাট প্রতিমন্ত্রী মির্জা আজম।
মন্ত্রিসভায় থেকেও দলে পদোন্নতি পেয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী নূরুল ইসলাম নাহিদ। তিনি এবার আওয়ামী লীগের সর্বোচ্চ নীতি-নির্ধারণী ফোরাম সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পেয়েছেন। আগের কমিটিতে তিনি ছিলেন শিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক।
নতুন কমিটিতে বাদ পড়েছেন চার মন্ত্রী ও পাঁচ প্রতিমন্ত্রী। পরিকল্পনা মন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল, তিনি ছিলেন গত কমিটির অর্থ ও পরিকল্পনা সম্পাদক। সংস্কৃতি মন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর, তিনি ছিলেন গত কমিটির সংস্কৃতি সম্পাদক। ধর্মমন্ত্রী অধ্যক্ষ মতিউর রহমান, তিনি ছিলেন গত কমিটির সদস্য। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রী ইয়াফেস ওসমান, তিনি ছিলেন গত কমিটিতে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সম্পাদক। প্রতিমন্ত্রীর মধ্যে রয়েছেন পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী বীর বাহাদুর। তিনি আওয়ামী লীগের গত কমিটির চট্টগ্রাম বিভাগের সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন। বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু, জুনাইদ আহমেদ পলক, অর্থ প্রতিমন্ত্রী এম এ মান্নান, ভূমি প্রতিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান জাভেদ গত কমিটিতে কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সদস্য থাকলেও এই কমিটিতে নেই।
আওয়ামী লীগ নেতারা বলছেন, আগামী জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে এবারের কেন্দ্রীয় কমিটি গঠন করা হচ্ছে। দলের নেতারা যেন সাংগঠনিক কাজে পুরোপুরি সময় দিতে পারেন এজন্য মন্ত্রীদের দলের দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেয়া হয়েছে। অন্যদিকে যারা দলে জায়গা পাননি তাদের মন্ত্রিসভায় স্থান দেয়া হতে পারে বলে জানিয়েছেন দলটির সূত্রগুলো।
শুক্রবার সভাপতিমণ্ডলীর বৈঠক শেষে দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের সাংবাদিকদের বলেন, শিগগিইর মন্ত্রিসভা রদবদল করা হবে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দলের একজন সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য বলেন, আগামী নির্বাচন দলকে বিজয়ী করার লক্ষে কাজ করতে আমাদের এ কার্যনির্বাহী কমিটি গঠন হচ্ছে।
বেসরকারি সংগঠন সুশাসনের জন্য নাগরিক- সুজনের সম্পাদক বিদিউল আলম মজুমদার আওয়ামী লীগের এই উদ্যোগকে ইতিবাচকভাবেই দেখছেন, তিনি বলেন, ‘এটা অবশ্যই একটা ভালো দিক। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার আগে নির্বাচনী ইশতেহার দিয়েছে। এতে জনগণের কাছে বেশ কিছু অঙ্গীকার করেছে তারা। সে অনুযায়ী কাজও করছে। এখন সব নেতা যদি মন্ত্রিসভায় থাকে, তাহলে দলের কর্মকাণ্ডে ব্যাঘাত ঘটে। এতে দল গতিশীল থাকে না। পাশাপাশি নির্বাচনী অঙ্গীকার পূরণে ব্যাঘাত ঘটলে ক্ষতিগ্রস্ত হবে দেশও।’
জনাব মজুমদার বলেন, ‘দল ও সরকার এক থাকলে জবাবহিদিতা কম থাকে। এই উদ্যোগে দল ও সরকারের জবাবহিদিতার পথ আরও সুগম হবে।’
নারীদের সংখ্যা বাড়া এটা একটা ইতিবাচক দিক। আমরা আশা করি, নির্বাচন কমিশনের যে বিধিটা আছে, সেটা আওয়ামী লীগ ২০ সালের মধ্যে শর্ত পূরণে আরও সক্রিয়ভাবে কাজ করবে।
২০০৮ সালের নির্বাচনের মাধ্যমে এক-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়ে সরকার গঠন করে আওয়ামী লীগ। ক্ষমতায় থাকাকালে দলটির তিনটি জাতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এরই মধ্যে দ্বিতীয় মেয়াদেও সরকার গঠন করেছে দলটি।
২০০৮ সালের নির্বাচনের পর ২০০৯ সালে গঠিত সরকারে কেন্দ্রীয় নেতাদের মধ্যে মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পান ২০ জন। ২০০৯ সালের ২৩ জুলাই সম্মেলনে মন্ত্রিসভার সদস্যরা দলীয় স্বপদে বহাল ছিলেন।
দলটির তৎকালীন সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য বেগম মতিয়া চৌধুরী কৃষিমন্ত্রী, আব্দুল লতিফ সিদ্দিকী পাট ও বস্ত্রমন্ত্রী, রাজিউদ্দিন আহমেদ রাজু ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী, অ্যাডভোকেট সাহারা খাতুন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্বে ছিলেন। পরবর্তী সময়ে দলটির সভাপতিমণ্ডলীর অপর সদস্য মহীউদ্দীন খান আলমগীর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
দলটির সদ্য সাবেক সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী, শিল্প ও বাণিজ্য বিষয়ক সম্পাদক লে কর্নেল (অব.) ফারুক খান বাণিজ্যমন্ত্রী, আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক সৈয়দ আবুল হোসেন যোগাযোগমন্ত্রী, কৃষি ও সমবায় বিষয়ক সম্পাদক ড. আব্দুর রাজ্জাক খাদ্য ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনামন্ত্রী, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ডা. দীপু মনি পররাষ্ট্রমন্ত্রী, শিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক নুরুল ইসলাম নাহিদ শিক্ষামন্ত্রী, মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক ক্যাপ্টেন (অব.) এ বি এম তাজুল ইসলাম মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক ইয়াফেস ওসমান বিজ্ঞান এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী, বন ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী থেকে বন ও পরিবেশমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেছিলেন।
দলটির সে কমিটির কেন্দ্রীয় সদস্য বেগম মন্নুজান সুফিয়ান শ্রম ও কর্মসংস্থানমন্ত্রী, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তিমন্ত্রী মোস্তফা ফারুক মোহাম্মদ, গৃহায়ণ ও গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্বে ছিলেন তৎকালীন দপ্তর সম্পাদক আবদুল মান্নান খান, স্থানীয় সরকার ও সমবায় প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্বে ছিলেন তৎকালীন যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক।
ক্ষমতা থাকাকালে ২০১২ সালের ২৯ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত হয় আওয়ামী লীগের ১৯তম জাতীয় সম্মেলন। সে সম্মেলনেও মন্ত্রিসভার সদস্যরা ছিলেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটিতে।
পরবর্তী সময়ে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি নির্বাচনের পর কেন্দ্রীয় কয়েকজন নেতা মন্ত্রিসভা থেকে বাদ পড়লেও দলীয় দায়িত্বে থেকে যান। তবে ২০১২ সালে কেন্দ্রীয় কমিটিতে দায়িত্ব পাওয়া একাধিক নেতা ২০১৪ সালে মন্ত্রিসভায় স্থান পান। ২০০৯ সালে গঠিত সরকার ও ২০১৪ সালে গঠিত সরকারে মন্ত্রিসভার প্রায় ২৭ জন সদস্য আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটিতে দায়িত্ব পালন করেন।
২০০৯ সালে গঠিত সরকারের মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ছিলেন। ২০১২ সালের সম্মেলনের মাধ্যমে গঠিত কমিটি থেকে বাদ পড়েন তিনি। বর্তমান তিনি জাতীয় সংসদের স্পিকার হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
বর্তমান জাতীয় সংসদের ডেপুটি-স্পিকার ফজলে রাব্বী মিয়া আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সদস্য থেকে বাদ পড়েছেন। তিনি ২০০৯ সালের সম্মেলনে ও ২০১২ সালের সম্মেলনে গঠিত কমিটির কেন্দ্রীয় সদস্য ছিলেন।
২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি নির্বাচনের পর গঠিত সরকারে স্বাস্থ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব পান দলটির সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মোহাম্মদ নাসিম, গণপূর্তমন্ত্রীর দায়িত্ব পান দলটির সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রীর দায়িত্ব পান দলটির সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ওবায়দুল কাদের, স্থানীয় সরকারমন্ত্রীর দায়িত্ব পান দলটির সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম, পরিকল্পনামন্ত্রীর দায়িত্ব পান দলের অর্থ ও পরিকল্পনা বিষয়ক সম্পাদক আ হ ম মুস্তফা কামাল, সংস্কৃতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পান সাংস্কৃতিক সম্পাদক আসাদুজ্জামান নূর, ধর্মমন্ত্রীর দায়িত্ব পান কেন্দ্রীয় সদস্য অধ্যক্ষ মতিউর রহমান, ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রীর দায়িত্ব পান কেন্দ্রীয় সদস্য মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া, অর্থপ্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পান কেন্দ্রীয় সদস্য এম এ মান্নান, পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পান দলটির সাংগঠনিক সম্পাদক বীর বাহাদুর, বস্ত্র ও পাট প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পান কেন্দ্রীয় সদস্য মির্জা আজম, বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ, তথ্য ও প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পান কেন্দ্রীয় সদস্য জুনাইদ আহমেদ পলক, ভূমি প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পান সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাভেদ।



This post has been seen 320 times.

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

সর্বশেষ শিরোনাম

অনুসন্ধান ক্যালেন্ডার

শনি রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র
 
১০
১১১২১৩১৪১৫১৬১৭
১৮১৯২০২১২২২৩২৪
২৫২৬২৭২৮২৯৩০৩১