কানে মোবাইল ফোন, অসতর্কতায় ঝরছে প্রাণ

প্রকাশিত: ২:৩৫ অপরাহ্ণ, অক্টোবর ১৫, ২০১৬

কানে মোবাইল ফোন, অসতর্কতায় ঝরছে প্রাণ

নিউ সিলেট ডেস্ক :: কানে মোবাইল দিয়ে রেললাইন ধরে হাঁটা। তারপর ব্যস্ত হয়ে পড়া কথা বলায়। ট্রেন আসছে। তবুও নেই সতর্কতা। হঠাৎ কখন যে, ট্রেন এসে ধাক্কা দিল তা টেরই পায়নি। আর ট্রেনের মুহূর্তের ধাক্কায় ছিটকে পড়া, অতঃপর মৃত্যু। এভাবেই কানে মোবাইলে কথা বলার সময় অসতর্কতায় রেললাইনে ঝরছে অসংখ্য প্রাণ। রেললাইনে যত দুর্ঘটনা ঘটে তার সিংহভাগই মোবাইল ফোন কানে অসতর্ক হয়ে চলার জন্য। ২৪ সেপ্টেম্বরের একটি ঘটনা।

মহাখালী এলাকার রেললাইন ধরে হাঁটছিলেন প্রকৌশলী আলমগীর হোসেন। এ সময় তিনি কারও সঙ্গে মোবাইল ফোনে কথা বলছিলেন। তাই তিনি কমলাপুরগামী নোয়াখালী এক্সপ্রেসের শব্দ শুনতে পাননি। মুহূর্তে ট্রেনের ধাক্কায় ছিটকে পড়েন তিনি। হাসপাতালে নেওয়ার আগেই তার মৃত্যু হয়। এর দু’দিন পর খিলগাঁওয়ে আইনজীবী সালাহ উদ্দিন ফটিক এবং পাঁচ দিন পর খিলক্ষেতে ট্রেনে কাটা পড়ে মারা যান ছাত্রলীগ নেতা ইসমাইল হোসেন রিয়াদ। তারা মোবাইল ফোন কানে দিয়ে রেললাইনে হাঁটার সময় দুর্ঘটনার শিকার হন।

ঢাকা রেলপথ থানার (জিআরপি) তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরে এ ধরনের ঘটনায় প্রাণ গেছে অন্তত ১০৫ জনের। এমন দুর্ঘটনা এড়াতে সতর্ক হয়ে চলাচলের পরামর্শ দিয়েছেন সংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তারা।

ঢাকা রেলপথ থানার সদ্য বিদায়ী ওসি আবদুল মজিদ বলেন, রেললাইনে যত দুর্ঘটনা ঘটে তার সিংহভাগই মোবাইল ফোন কানে অসতর্ক হয়ে চলার জন্য। চলতি বছর ঢাকা রেলপথ থানা এলাকায় ট্রেনের ধাক্কায় ও কাটা পড়ে ২৩৪ জনের মৃত্যু হয়। এর প্রায় অর্ধেকই মোবাইল ফোনে কথা বলার সময় ঘটে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি দুর্ঘটনা ঘটে কমলাপুর থেকে কুড়িল পর্যন্ত রেলপথে। এই অংশে অন্তত ৮৫ জন মারা গেছেন চলতি বছরের নয় মাসে। ঢাকা-গাজীপুর ও ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রেলপথ মিলিয়ে এই সংখ্যা ১০৫ জন।

ঢাকা রেলপথ থানার বর্তমান ওসি ইয়াছিন ফারুক মজুমদার বলেন, রেললাইনে হাঁটার ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা এবং স্থায়ীভাবে ১৪৪ ধারা জারি থাকলেও কেউ তা মানেন না। এ নিয়ে কঠোর অবস্থানেও যেতে পারে না পুলিশ। সে ক্ষেত্রে জনচলাচলে বাধা দেওয়ার অভিযোগ উঠতে পারে।

পুলিশের এ কর্মকর্তা জানান, দুর্ঘটনা এড়াতে রেললাইনের ওপর দিয়ে না হাঁটার অভ্যাস এড়িয়ে চলাই ভালো। এরপরও জরুরি প্রয়োজনে রেললাইনের ওপর দিয়ে যেতে হলে সতর্ক থাকা উচিত। তবে রেললাইনের নির্ধারিত ১০ ফুট এলাকার দুই পাশে সীমানা প্রাচীর দিলে এ ধরনের দুর্ঘটনা ঘটার সম্ভাবনা কমে যাবে। দুর্ঘটনা এড়াতে জনসচেতনতামূলক প্রচার চালানোর ব্যাপারে গুরুত্বারোপ করেন তিনি।

রেলপথ পুলিশের কর্মকর্তারা জানান, রেলপথের যে অংশটুকু শহর এলাকায় পড়ে, সেটুকুতেই দুর্ঘটনা বেশি ঘটে। গড়ে প্রতিদিনই দুর্ঘটনায় একজনের মৃত্যু হয়। তবে রেললাইন থেকে উদ্ধার করা লাশের সবই যে দুর্ঘটনা, তাও নয়। কারণ চলতি বছরের ঘটনাগুলোর মধ্যে অন্তত চারটি তদন্তে হত্যা হিসেবে প্রমাণ পাওয়া গেছে। অন্য কোথাও হত্যার পর ঘটনা ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করতে রেললাইনে লাশ ফেলা হয়েছিল। এরকমই একটি ঘটনা ঘটে গত ৪ জুলাই। সেদিন তেজগাঁও এলাকার রেললাইনে খলিল নামে এক মুরগি ব্যবসায়ীর লাশ পাওয়া যায়। ময়নাতদন্তে জানা যায়, তাকে ছুরিকাঘাতে হত্যার পর রেললাইনে ফেলা হয়েছে।

এ ছাড়া বনানীতে একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র, মহাখালীতে টোব্যাকো কোম্পানির কর্মকর্তা ও জয়দেবপুরে রেজাউল নামে একজনের মৃত্যুর ঘটনাও তদন্তে হত্যা প্রমাণিত হয়। ট্রেনে কাটা পড়ে মৃত্যুর কিছু ঘটনা প্রকৃতপক্ষে আত্মহত্যা। তবে এসব ঘটনা প্রমাণ করা মুশকিল হয়ে পড়ে।

সর্বশেষ গত ২৮ সেপ্টেম্বর খিলক্ষেত এলাকায় ট্রেনে কাটা পড়ে মারা যান কলেজছাত্রী নূরে জান্নাত। প্রাথমিক তদন্তে জানা যায়, পরীক্ষার ফল খারাপ হওয়ায় তিনি আত্মহত্যা করেন। গত ১ অক্টোবর কুড়িল বিশ্বরোড এলাকায় ট্রেনের ধাক্কায় জমিলা খাতুন নামে এক তরুণীর মৃত্যু হয়। এটি আত্মহত্যা নাকি দুর্ঘটনা তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি।



This post has been seen 519 times.

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

সর্বশেষ শিরোনাম

অনুসন্ধান ক্যালেন্ডার

শনি রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র
 
১০
১১১২১৩১৪১৫১৬১৭
১৮১৯২০২১২২২৩২৪
২৫২৬২৭২৮২৯৩০৩১