দুই মাসের মধ্যেই রোহিঙ্গা ফেরত প্রক্রিয়া শুরু : পররাষ্ট্রমন্ত্রী

প্রকাশিত: ৩:৩৬ অপরাহ্ণ, নভেম্বর ২৫, ২০১৭

দুই মাসের মধ্যেই রোহিঙ্গা ফেরত প্রক্রিয়া শুরু : পররাষ্ট্রমন্ত্রী

নিউ সিলেট ডেস্ক : পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী বলেছেন, মিয়ানমার রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে নিজ দেশে ফিরিয়ে নিতে বাংলাদেশের সঙ্গে সমঝোতা মেনে চলবে বলে আশাবাদী তিনি। তিনি বলেন, দুই মাসের মধ্যেই এই প্রক্রিয়া শুরু হবে। তবে কবে শেষ হবে, সেটা নিশ্চিত নয়। শনিবার (নভেম্বর) এক সংবাদ সম্মেলনে মন্ত্রী এ কথা বলেন।
মাহমুদ আলী জানান, রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানো শুরুর আগে দুই পক্ষে যে যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপ করার কথা বলা হয়েছে সেটির কাজ শুরু হবে তিন সপ্তাহের মধ্যেই। মিয়ানমারের সঙ্গে ডে সমঝোতা হয়েছে তাতে সরকার খুশি। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এটা চুক্তিই এবং মিয়ানমার এটা মেনে চলবে।
রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেয়ার বিষয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে একাধিক সমঝোতা ও চুক্তি হয়েছে মিয়ানমারের। কিন্তু সেগুলো সেভাবে প্রতিপালন করেনি তারা।
মন্ত্রী জানান, ১৯৯২ সালে মিয়ানমারের সঙ্গে যেভাবে চুক্তি হয়েছিল, সেটাকে ভিত্তি ধরেই এবারের চুক্তি করা হয়েছে। আর মিয়ানমার এই চুক্তি মেনে চলবে বলে আশাবাদী তিনি।
তিনি বলেন, ১৯৯২ সালের চুক্তি তারা অনুসরণ করতে চায়। সেভাবেই জিনিসটি করা হয়েছে। গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো ফিরিয়ে নেওয়া। এতে ত্রুটি-বিচ্যুতি আছে, এটা নাই সেটা নাই- এসব বলে লাভ নাই। মিয়ানমার চাইছে ১৯৯২ সালের চুক্তি অনুযায়ী রোহিঙ্গা ফেরত নেবে। আমরা চাইছি রোহিঙ্গাদের ফেরত দিতে। এখন তাদেরকে তো সেখানে থাকার ব্যবস্থাও করতে হবে। দেখি তারা কী ব্যবস্থা নেয়
মিয়ানমার এই সমঝোতা মানতে বাধ্য কি না, এমন প্রশ্নে পররাষ্ট্র মন্ত্রী বলেন, বাধ্যবাধকতা আছে। কিন্তু আইন থাকলেও লঙ্ঘন হয়। আবার আইন টাইন দিয়ে কোনো কিছু হবে না। মূল বিষয় হচ্ছে যে বিষয়ে চুক্তি হয়েছে সেটি রাষ্ট্র (মিয়ানমার) মানে কি না। চুক্তি বা আইন বড় কথা নয়। কারণ অনেক দেশই আইন মানে না। তারা যুদ্ধ করে। অনেক দেশই এ কারণে ধ্বংস হয়ে গেছে। যেখানে আমাদের শান্তিরক্ষী বাহিনীও কাজ করছে। সুতরাং মূল বিষয় হলো আমরা দুইদেশ কিছু বিষয়ে এক মত হয়েছি। এখন দেখার বিষয় এটি বাস্তবায়ন হওয়াটা।
এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, আমাদের সঙ্গে পুরো বিশ্বই আছে। রোহিঙ্গা ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়ায় যথাসময়ে জাতিসংঘের সংস্থা ইউএনএইচসিআরকেও সংযুক্ত করতে হবে। গত আগস্টে রাখাইন রাজ্যে নিরাপত্তা বাহিনীর ওপর সশস্ত্র গোষ্ঠীর হামলার পর রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে অভিযানে নামে সেনাবাহিনী। আর প্রাণ বাঁচাতে বাংলাদেশের দিকে ছুটে আসতে থাকে হাজার হাজার মানুষ। শুরুতে বাধা দিলেও পরে রাখাইন রাজ্যের পরিস্থিতির ব্যাপকতা জানতে পেরে সীমান্ত খুলে দেয় বাংলাদেশ এবং গত কয়েক মাসে সাড়ে ছয় লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা প্রবেশ করেছে দেশে। কক্সবাজারের বিভিন্ন ক্যাম্পে রোহিঙ্গাদের আশ্রয় হয়েছে। তাদের খাবার ও বাসস্থানের সংস্থানের পাশাপাশি এই মানুষদেরকে নিরাপদে নিজ দেশে ফিরিয়ে দেয়ার চেষ্টায় আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বিষয়টি তুলে ধরে ঢাকা। জাতিসংঘেও এ বিষয়ে জোড়াল অবস্থান নেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বৈশ্বিকভাবে মিয়ানমারকে চাপ দেয়ার পাশাপাশি দ্বিপাক্ষিক আলোচনা চালিয়ে যেতে থাকে সরকার। আর গত বুধবার দেশটিতে গিয়ে প্রথমে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং পরদিন দেশটির নেত্রী অং সান সুচির সঙ্গে বৈঠক করেন পররাষ্ট্র মন্ত্রী। ওই বৈঠকের পরই দুই পক্ষে সই হয় একটি সমঝোতা স্মারক। এই স্মারক সইয়ের পর গণমাধ্যমকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা নাম প্রকাশ না করে দুই মাসের মধ্যে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন শুরুর বিষয়ে আশাবাদের কথা জানিয়েছিলেন। এবার পররাষ্ট্রমন্ত্রী নিজেও এই আশাবাদ তুলে ধরলেন।
দুই মাসের মধ্যে শুরু হয়ে কবে নাগাদ শেষ হবে প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া-এমন প্রশ্নে মন্ত্রী বলেন, ফিরিয়ে নেওয়ার কোনও টাইমফ্রেম দেওয়া যায় না। প্র্যাকটিক্যাল ব্যাপার হলো, এরকম কোনও টাইমফ্রেম দিয়ে কোনও লাভও নেই। মিয়ানমারের রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ এবারই প্রথম নয়। রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব বাতিলের পর ৮০ দশক থেকে নানা সময় সেনা অভিযানের মুখে সাড়ে তিন লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা পালিয়ে আশ্রয় নিয়েছে বাংলাদেশে। সবশেষ অনুপ্রবেশ মিলিয়ে এই সংখ্যাটা ১০ লাখ ছাডিয়েছে।dt/ns/-



This post has been seen 238 times.

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

সর্বশেষ শিরোনাম

অনুসন্ধান ক্যালেন্ডার

শনি রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র
 
১০
১১১২১৩১৪১৫১৬১৭
১৮১৯২০২১২২২৩২৪
২৫২৬২৭২৮২৯৩০৩১