রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে দুই দেশের যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপ গঠন

প্রকাশিত: ২:৩৩ অপরাহ্ণ, ডিসেম্বর ১৯, ২০১৭

রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে দুই দেশের যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপ গঠন

নিউ সিলেট ডেস্ক : মিয়ানমারের সেনা অভিযানের মুখে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের প্রক্রিয়া নির্ধারণে দুই দেশের মধ্যে গঠন করা হয়েছে যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপ। মঙ্গলবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন মেঘনায় দুই দেশের পররাষ্ট্র সচিব পর্যায়ে বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত হয়। তিন ঘণ্টাব্যাপী বৈঠকের পর যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপ গঠন ও এর টার্মস অব রেফারেন্সের সম্মতিপত্রে সই হয়। বাংলাদেশের পক্ষে সম্মতিপত্রে সই করেন পররাষ্ট্র সচিব এম শহিদুল হক এবং মিয়ানমারের পক্ষে দেশটির পার্মানেন্ট সেক্রেটারি মিন্ট থো।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী দুই দেশের মধ্যে চুক্তি সইয়ে বলেছেন, শিগগির এই কমিটি কাজ শুরু করবে।
বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী এই কমিটিতে দুই দেশের ১৫ জন করে মোট ৩০ জন কর্মকর্তা থাকবেন। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা ছাড়াও স্বরাষ্ট্র, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়ের সদস্য এবং কক্সবাজারের জেলা প্রশাসকও থাকবেন।
বৈঠকে আলোচনা অনুযায়ী, রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন কোন প্রক্রিয়ায় শুরু হবে, সেটি নির্ধারণ করবে এই ওয়ার্কিং গ্রুপ। ফেব্রুয়ারি নাগাদ এই কাঠামো তৈরি হয়ে যাবে বলে আশা করছে দুই পক্ষ। এরপরই রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন শুরু হবে।
বৈঠকের পর পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ মাহমুদ আলী বলেন, আগেই দুই দেশের মধ্যে অ্যারেঞ্জমেন্ট সই হয়েছিল। এখন তার অধীনে যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপও তৈরি হয়ে গেল। এখন পরবর্তী ধাপের কাজ শুরু হবে।
গত অক্টোবরে ঢাকায় মিয়ানমারের নেত্রী অং সান সু চির দপ্তরের মন্ত্রী কিউ টিন্ট সোয়ের সঙ্গে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলীর মধ্যে বৈঠকে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসকে ‘জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপ’ গঠনের বিষয়ে আলোচনা হয়। এরপর গত ২৩ নভেম্বর মিয়ানমারের রাজধানী নেপিডোতে রোহিঙ্গাদেরকে ফিরিয়ে নেয়ার বিষয়ে দুই পক্ষের মধ্যে এ বিষয়ে একটি সমঝোতা স্মারক সই হয়। সেখানেও এই প্রক্রিয়া শুরু করতে যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপ করার বিষয়ে আলোচনা হয়।
রাখাইন রাজ্যে বসবাসকারী মুসলিম রোহিঙ্গাদেরকে নিজের নাগরিক বলে স্বীকার করে না মিয়ানমার। এক সময় তাদের নাগরিক অধিকার থাকলেও তা বাতিল করা হয় ১৯৮২ সালে। মিয়ানমারের দাবি, রোহিঙ্গারা বাংলাদেশি এবং তাদেরকে বাংলাদেশে ফিরে আসতে হবে। ওই বছর থেকেই নানা সময় রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে অভিযান চালিয়েছে দেশটির সেনাবাহিনী এবং নানা সময় বাংলাদেশে প্রাণ বাঁচাতে এসেছে কয়েক লাখ রোহিঙ্গা। এদেরকে ফিরিয়ে নিতে বারবার আলোচনা হলেও মিয়ানমার সেই উদ্যোগ নেয়নি।
আগস্টের শেষ দিকে রাখাইন রাজ্যে কয়েকটি পুলিশি চেকপোস্টে হামলার জেরে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে দমন-পীড়ন শুরু করে দেশটির সেনাবাহিনী। প্রাণ বাঁচাতে ২৫ আগস্ট থেকে বাংলাদেশের দিকে ছুটে আসে রোহিঙ্গারা। আর মানবিক কারণে সীমান্ত খুলে দেয় বাংলাদেশ। এরপর দুই মাসে ছয় থেকে সাত লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। সব মিলিয়ে এখন বাংলাদেশে ১০ লাখের বেশি রোহিঙ্গা বসবাস করছে বলে সরকারের তথ্য বলছে।
রোহিঙ্গাদের কক্সবাজারে অস্থায়ী শরণার্থী শিবিরে আশ্রয় দেওয়া বাংলাদেশ এই বিষয়টি এবার জাতিসংঘে তুলে ধরেছে বেশ জোরালভাবে। সাধারণ অধিবেশনের ভাষণে প্রধানমন্ত্রী রোহিঙ্গাদের ওপর অত্যাচার নির্যাতনের কথা তুলে ধরে তাদেরকে প্রত্যাবাসনে আন্তর্জাতিক সহায়তা চান। এরপর রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে সামরিক অভিযান বন্ধ ও তাদের ফিরিয়ে নিতে বাংলাদেশের প্রস্তাব বিপুল ভোটে পাস হয়েছে জাতিসংঘে।
রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফিরিয়ে নিতে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে চেষ্টার পাশাপাশি দ্বিপাক্ষিক আলোচনা চালিয়ে যায় ঢাকা।dt/ns/-



This post has been seen 247 times.

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

সর্বশেষ শিরোনাম

অনুসন্ধান ক্যালেন্ডার

শনি রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র
 
১০
১১১২১৩১৪১৫১৬১৭
১৮১৯২০২১২২২৩২৪
২৫২৬২৭২৮২৯৩০৩১