পাবলিক পারসেপশনের দিকে তাকাই না : প্রধান বিচারপতি, আইনজীবীদের বিক্ষোভ

প্রকাশিত: ২:১২ অপরাহ্ণ, মার্চ ১৪, ২০১৮

পাবলিক পারসেপশনের দিকে তাকাই না : প্রধান বিচারপতি, আইনজীবীদের বিক্ষোভ

নিউ সিলেট ডেস্ক :  বিএনপির চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার জামিন বাতিলে আপিল শুনানিতে আইনজীবীদের এক বক্তব্যে উষ্মা প্রকাশ করেছেন প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন। আজ বুধবার সকালে আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে খালেদা জিয়াকে চার মাসের জামিন দিয়ে হাইকোর্টের আদেশের বিরুদ্ধে শুনানি হয়। এ সময় দুর্নীতি দমন কমিশন হাইকোর্ট বেঞ্চের আদেশের সার্টিফাইড কপি না পাওয়ার কথা বলে সময়ের আবেদন করেন। প্রধান বিচারপতি আবেদন মঞ্জুর করলে খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা তাদের বক্তব্য শোনার জন্য অনুরোধ করেন। এ সময় সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সহসভাপতি গিয়াসউদ্দিন আহমেদের একটি বক্তব্যের জবাবে প্রধান বিচারপতি তাকে বলেন, আপনি কি আদালতকে থ্রেট করছেন? পরে গিয়াসউদ্দিন বক্তব্য চালিয়ে যেতে থাকলে প্রধান বিচারপতি বলেন, থ্রেট দেবেন না।
জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় পাঁচ বছরের কারাদণ্ড পাওয়া বেগম খালেদা জিয়াকে গত সোমবার চার মাসের জামিন দেয় বিচারপতি ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি সহিদুল করিমের হাইকোর্ট বেঞ্চ। গতকাল মঙ্গলবার এই আদেশের বিরুদ্ধে চেম্বার বিচারপতির কাছে আপিল করে রাষ্ট্রপক্ষ এবং মামলার বাদী দুর্নীতি দমন কমিশন। ওইদিন আবেদনটি পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে পাঠান চেম্বার বিচারপতি।
আজ বুধবার সকালে শুনানির শুরুতেই দুদকের আইনজীবী খুরশিদ আলম খান বলেন, হাইকোর্ট চারটি কারণ দেখিয়ে খালেদা জিয়াকে জামিন দিয়েছে। আমরা এখনও সে আদেশের সার্টিফায়েড কপি পাইনি। আদেশের কপি পেলে লিভ টু আপিল করব।
এ সময় প্রধান বিচারপতি বলেন, সিপি ফাইল করে আসেন।
এসময় দুদকের আইনজীবী বলেন, সিপি ফাইল করতে রবিবার-সোমবার পর্যন্ত আমাদেরকে সময় দেয়া হোক। এ পর্যন্ত জামিন স্থগিত রাখা হোক।
এরপর আদালত বলেন, ঠিক আছে সিপি ফাইল করে আসেন রবিবারের মধ্যে। এ পর্যন্ত জামিন স্টে থাকবে। তখন সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি ও খালেদার আইনজীবী জয়নুল আবেদীন বলেন, আমাদের কথা আগে শুনেন। আমাদের বক্তব্য তো শুনেন নাই। আমাদের বক্তব্য না শুনে এভাবে আদেশ দিতে পারেন না।
প্রধান বিচারপতি বলেন, শুনতে হবে না। রবিবার পর্যন্ত তো স্থগিত দিয়েছি। ওই দিন আসেন তখন শুনব।
জয়নুল আবেদীন বলেন, আপনি যে একতরফাভাবে শুনানি করে আদেশ দিলেন, এতে আদালতের প্রতি পাবলিক পারসেপশন খারাপ হবে।
জবাবে প্রধান বিচারপতি বলেন, আমরা পাবলিক পারসেপশনের দিকে তাকাই না। কোর্টকে কোর্টের মত চলতে দিন। এরপর জয়নুল আবেদীন ও এ জে মোহাম্মদ আলী বলেন, আমাদের কোন কথা না শুনেই তো আদেশ দিলেন।
প্রধান বিচারপতি বলেন, আমরা অন্তর্বর্তীকালীন আদেশ দিয়েছি। আমাদের শোনার দরকার নেই।
জয়নুল আবেদীন বলেন, এই মামলায় চেম্বার আদালত তো স্টে দেয়নি। এই সময়ের মধ্যে আসামিও বের হবে না। তাই স্টের প্রয়োজন নেই। খালেদা জিয়ার আইনজীবী এ জে মোহাম্মদ আলী বলেন, এক পক্ষের কথা শুনলেন তো আমরাদের কথা শুনানির সুযোগ পেলাম না। এরপরই কার্যতালিকা থেকে অন্য মামলা শুনানি শুরু হয়।
এক পর্যায়ে খালেদা জিয়ার পক্ষে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সহ সভাপতি গিয়াস উদ্দিন আহমদ দাঁড়িয়ে বলেন, আপনি তো না শুনেই একতরফা আদেশ দিলেন। আমাদের কথা শুনতে হবে। কেন শুনবেন না?
তখন প্রধান বিচারপতি বলেন, কার কথা শুনব, কার কথা শুনব না তা কি আপনার কাছে শুনতে হবে? গিয়াস উদ্দিন তখন কিছুটা উত্তেজিত হয়ে বলেন, আমাদের কথা আপনাকে শুনতেই হবে।
তখন প্রধান বিচারপতি বলেন, আপনি কি আদালতকে থ্রেট করছেন?
গিয়াস উদ্দিন বলেন, শুনে তারপর আদেশ দিতে হবে।
তখন প্রধান বিচারপতি বলেন, থ্রেট দেবেন না।
এক পর্যায়ে অ্যাটর্নি জেনারেলকে উদ্দেশ্য করে ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন বলেন, আপনি তো কোর্টকে শেষ করে দিলেন।
তখন অ্যাটর্নি কোন উত্তর না দিয়ে চুপ করে দাঁড়িয়েই ছিলেন। তখন একদল আইনজীবী ‘দালাল দালাল’ বলে আদালত কক্ষ ত্যাগ করেন।
এদিকে, প্রধান বিচারপতির পদত্যাগ দাবিতে খালেদার আইনজীবীরা বিক্ষোভ করেছেন। বেগম খালেদা জিয়াকে চার মাসের জামিন দিয়ে হাইকোর্টের আদেশ রবিবার পর্যন্ত স্থগিত করার আদেশ দেয়ার পর প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের পদত্যাগ চেয়ে সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণে বিক্ষোভ করেছে বিএনপিপন্থী আইনজীবীরা। আইনজীবীরা আদালত ভবন থেকে বের হয়ে মিছিল নিয়ে আইনজীবী ভবন প্রদক্ষিণ করেন। আজ বুধবার সকাল সোয়া নয়টার দিকে প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বে চার বিচারপতির আপিল বেঞ্চ খালেদা জিয়ার জামিন স্থগিত করে আগামী রবিবার শুনানির জন্য দিন নির্ধারণ করেন। শুনানির শুরুতে দুর্নীতি দমন কমিশনের আইনজীবী খুরশিদ আলম খান হাইকোর্টের আদেশের সার্টিফাইড কপি পাওয়া যায়নি বলে সময়ের আবেদন করেন। আর প্রধান বিচারপতি রবিবার পর্যন্ত সময় দেন।
এ সময় খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা তাদের বক্তব্য শোনার জন্য আদালতকে অনুরোধ জানান। তখন প্রধান বিচারপতি বলেন, তিনি অন্তর্বর্তী আদেশ দিয়েছেন, রবিবার বক্তব্য শুনবেন।
এরপরও বেশ কয়েকজন আইনজীবী প্রধান বিচারপতির সঙ্গে বাকবিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়েন। আর খালেদা জিয়ার আইনজীবী গিয়াসউদ্দিন আহমদের বক্তব্যে বিরক্ত হয়ে এক পর্যায়ে প্রধান বিচারপতি বলেন, আপনি কি আদালতকে থ্রেট করছেন?’। গিয়াসউদ্দিন তার বক্তব্য চালিয়ে যেতে থাকলে প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘থ্রেট দেবেন না।
সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি জয়নুল আবেদিন বলেন, তাদের বক্তব্য না শুনে আদেশ দিলে ‘পাবলিক পারসেপশন’ ভালো হবে না। তখন প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘আমরা পাবলিক পারসেপশনের দিকে তাকাই না। কোর্টকে কোর্টের মত চলতে দিন। এক পর্যায়ে আদালত কক্ষ থেকে ‘লজ্জা লজ্জা’ বলে বের হয়ে আসেন বিএনপিপন্থী আইনজীবীরা।
সেখান থেকে বের হয়েই প্রধান বিচারপতির পদত্যাগসহ বিভিন্ন ধরনের স্লোগান দিতে থাকেন আইনজীবীরা।
স্লোগানের মধ্যে ছিল, ‘আইনজীবীদের দাবি এক, প্রধান বিচারপতির পদত্যাগ’, ‘এক দফা এক দাবি প্রধান বিচারপতি কবে যাবি’ ‘খালেদা জিয়া জেলে কেন, শেখ হাসিনা জবাব চাই’।
উল্লেখ্য, গত সোমবার খালেদা জিয়াকে চার মাসের জামিন দেয় বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম এবং বিচারপতি সহিদুল করিমের হাইকোর্ট বেঞ্চ। চারটি যুক্তিতে খালেদা জিয়াকে চার মাসের জামিন দেয়। জামিনের আদেশের কপি গতকাল মঙ্গলবার মুখ্য বিচারিক হাকিম আদালতে পৌঁছায়। খালেদা জিয়ার আইনজীবীদের জামিননামা দাখিল করার পর আজই জামিনের আদেশের কপি কারাগারে যাওয়ার কথা ছিল। তবে গতকাল মঙ্গলবারই চেম্বার বিচারপতির কাছে জামিনের বিরুদ্ধে আপিল করে রাষ্ট্রপক্ষ এবং মামলার বাদী দুদক। চেম্বার বিচারপতি সে আবেদন পাঠিয়ে দেন আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে।
গত ৮ ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় বিএনপি প্রধান খালেদা জিয়াকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড এবং দুই কোটি ১০ লাখেরও বেশি টাকা জরিমানা করে বিচারিক আদালত। ওই দিন থেকেই পুরান ঢাকার নাজিমুদ্দীন রোডে কেন্দ্রীয় কারাগারে রাখা হয়েছে তাকে।
গত ২০ ফেব্রুয়ারি কারাদণ্ডের বিরুদ্ধে আপিল করেন খালেদা জিয়া। আপিল আবেদনে বিচারিক আদালতের দণ্ড থেকে খালাস চেয়ে ৪৪টি যুক্তি দেখানো হয়। আপিল নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত বিচারিক আদালতের দণ্ড স্থগিত চাওয়া হয়।
২২ ফেব্রুয়ারি খালেদা জিয়ার আপিল শুনানির জন্য গ্রহণ করেন হাইকোর্ট। একই সঙ্গে বিচারিক আদালতের দেয়া জরিমানার আদেশও স্থগিত করা হয়।
খালেদা জিয়ার জামিন আবেদনের ওপর শুনানি হলেও ২৫ ফেব্রুয়ারি আদেশ দেয়নি হাইকোর্ট বেঞ্চ। জানানো হয়, বিচারিক আদালত থেকে মামলার নথি আসলে এই আদেশ দেয়া হবে।
১১ মার্চ দুপুরের পর এই নথি আসে উচ্চ আদালতে। পরদিন হাইকোর্ট বেঞ্চ বিএনপি চেয়ারপারসনকে চার মাসের জামিন দেয়। একই সময়ের জন্য এই মামলার পেপার বুক তৈরির নির্দেশ দেন দুই বিচারক। জানানো হয়, পেপার বুক তৈরির পর যে কোনো পক্ষের আবেদনে শুনানি শুরু করে।
একই দিন ২০১৫ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি কুমিল্লায় বাসে পেট্রল বোমা হামলায় আট জনকে হত্যার ঘটনায় করা এক মামলায় খালেদা জিয়াকে গ্রেপ্তার দেখানোর আদেশ দেয় কুমিল্লার একটি বিচারক।dt/ns/-



This post has been seen 462 times.

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

সর্বশেষ শিরোনাম

অনুসন্ধান ক্যালেন্ডার

শনি রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র
 
১০
১১১২১৩১৪১৫১৬১৭
১৮১৯২০২১২২২৩২৪
২৫২৬২৭২৮২৯৩০৩১