বাংলাদেশের সামনে কঠিন চ্যালেঞ্জ

প্রকাশিত: ৭:০৪ অপরাহ্ণ, অক্টোবর ২২, ২০১৬

বাংলাদেশের সামনে কঠিন চ্যালেঞ্জ

নিউ সিলেট:::  তালগোল পাকিয়ে প্রথম ইনিংসে বাংলাদেশ মাত্র ২৪৮ রানে গুটিয়ে যাওয়ার পর বেশ চাপে পড়েছিল টাইগার শিবির। তবে সাকিব আল হাসান ও তাইজুল ইসলাম দুর্দান্ত স্পিনে দ্বিতীয় ইনিংসে ৬২ রান তুলতেই ইংল্যান্ডের শীর্ষ পাঁচ ব্যাটসম্যানকে সাজঘরে পাঠিয়ে বাংলাদেশকে জয়ের স্বপ্নই দেখাচ্ছিলেন। জনি বেয়ারস্টো ও বেন স্টোকসের অসাধারণ প্রতিরোধে ফের স্বপ্নযাত্রার পথে ধাক্কা খায় বাংলাদেশ। কিন্তু দিনের শেষ ঘণ্টায় বোলারদের দৃঢ়তায় ফের ম্যাচে ফেরার চেষ্টা চালায় লাল সবুজের দল। তারপরও চালকেই আসনেই রয়েছে ইংল্যান্ড। দিন শেষে ২ উইকেট হাতে রেখে ২৭৩ রানের লিড নিয়েছে সফরকারীরা।
চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত টেস্টের প্রথম ইনিংসে ২৯৩ রানে গুটিয়ে যায় ইংল্যান্ড। শনিবার ৫ উইকেটে ২২১ রান নিয়ে ব্যাটিংয়ে নামা বাংলাদেশ ২৪৮ রানে গুটিয়ে গেলে ৪৫ রানের লিড পায় ইংলিশরা। ৪৫ রানের লিড নিয়ে ব্যাটিংয়ে নামা ইংল্যান্ড দিন শেষে ৮ উইকেট হারিয়ে ২২৮ রান সংগ্রহ করেছে।
খাদের কিনারা থেকে ইংল্যান্ডকে টেনে তোলার কৃতিত্ব স্টোকস ও বেয়ারস্টোর। ষষ্ঠ উইকেটে এই দুজন ১২৭ রানের অনবদ্য জুটি গড়লে ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ নেয় সফরকারীরা। এই নিয়ে টানা ৭ ইনিংসে ফিফটি প্লাস রানের জুটি গড়লেন এই দুজন।
দ্বিতীয় ইনিংসে ইংল্যান্ডের হয়ে স্টোকস সর্বোচ্চ ৮৫ রান করেন। এছাড়া বেয়ারস্টোর ব্যাট থেকে আসে ৪৭ রান। দিন শেষে স্টুয়ার্ট ব্রড ১০ ও ক্রিস ওকস ১১ রান নিয়ে অপরাজিত রয়েছেন।
দ্বিতীয় ইনিংসে বাংলাদেশের সফলতম বোলার সাকিব। ৭৯ রানে পাঁচ ইংলিশ ব্যাটসম্যানকে সাজঘরে পাঠানোর পথে প্রথম বাংলাদেশি বোলার হিসেবে টেস্টে ১৫০ উইকেট নেয়ার মাইলফলক গড়েন এই টাইগার অলরাউন্ডার। এছাড়া স্বাগতিকদের হয়ে একটি করে উইকেট নেন তাইজুল, মেহেদী হাসান মিরাজ ও কামরুল হাসান রাব্বি।
৪৫ রানের লিড নিয়ে ব্যাটিংয়ে নামা ইংল্যান্ডকে প্রথম ধাক্কাটা দেন মিরাজ। দলীয় ২৬ রানের মাথায় মিরাজের বলে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদকে ক্যাচ দিয়ে সাজঘরে ফেরেন ইংলিশ দলনায়ক অ্যালেস্টার কুক (১২)। এরপরই ম্যাজিক দেখান সাকিব। দুই রানের ব্যবধানে পরপর দুই ওভারে জো রুট ও বেন ডাকেটকে আউট করে বাংলাদেশকে ম্যাচে ফিরিয়ে আনেন এই বাঁহাতি স্পিনার।
২৮ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে চাপে পড়া ইংল্যান্ডকে বিপদমুক্ত করার চেষ্টা করেন গ্যারি ব্যালান্স ও মঈন। তবে দলীয় ১৯তম ওভারের দ্বিতীয় বলে ৪৬ রানের মাথায় ব্যালান্সকে ইমরুল কায়েসের দারুণ এক ক্যাচ বানিয়ে সাজঘরে পাঠিয়ে চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে গর্জন তোলেন তাইজুল।
এরপর মঈন ও স্টোকস মিলে দেখেশুনেই এগোচ্ছিলেন। তবে বেশিক্ষণ স্থায়ী হতে পারেনি এই জুটি। ইনিংসের শুরু থেকেই টানা বোলিং করা সাকিব নিজের ১৪তম ও দলীয় ২৮তম ওভারের প্রথম বলে মঈনকে আউট করে বাংলাদেশকে ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ এনে দেন।
তবে এরপরের গল্পটুকু স্টোকস ও বেয়ারস্টোর। ষষ্ঠ উইকেটে ২০৭ বলে ১২৭ রানের নান্দনিক এক জুটি গড়ে ইংল্যান্ডকে পুরোপুরি ম্যাচে ফিরিয়ে আনেন এই দুই ইনফর্ম ব্যাটসম্যান। ৬২তম ওভারে দলীয় ১৮৯ রানের মাথায় বেয়ারস্টোকে আউট করে প্রথম আন্তর্জাতিক উইকেটের স্বাদ পান রাব্বির। তিন ওভার আক্রমণে এসে স্টোকসকে লেগ বিফোরের ফাঁদে ফেলে বাংলাদেশকে ফের ম্যাচে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করেন সাকিব।
দলীয় ১৯৭ রানের মাথায় ৭ উইকেট হারানোর পর অষ্টম উইকেটে আদিল রশিদ ও ক্রিস ওকস মিলে রানের ছোট্ট অথচ কার্যকরী এক জুটি গড়েন। দলীয় ২১৩ রানের মাথায় রশিদকে লেগ বিফোরের ফাঁদে ফেলে বাংলাদেশের মুখে হাসি ফোটান সাকিব। এরপর স্টুয়ার্ড ব্রড ও ওকস মিলে ১৫ রানের অবিচ্ছিন্ন জুটি গড়ে ইংল্যান্ডকে চালকের আসনেই রাখেন।
এর আগে শনিবার ৫ উইকেটে ২২১ রান নিয়ে ব্যাটিংয়ে নামা বাংলাদেশকে বাজে ব্যাটিংয়ের পসরা সাজিয়ে ২৪৮ রানেই গুটিয়ে যায়। দিনের দ্বিতীয় বলে ক্রিজ ছেড়ে বেরিয়ে এসে সাকিবের স্ট্যাম্পিংয়ের হওয়ার মধ্য দিয়ে টাইগারদের পতনের শুরু। সপ্তম উইকেটে শফিউল ইসলাম ও সাব্বির রহমান মিলে ১৭ রানের জুটি গড়লেও এরপর আর কেউ সুবিধা করতে পারেননি। স্টোকস বাংলাদেশের শেষ চারটি উইকেট তুলে নিয়ে স্বাগতিকদের ২৪৮ রানে গুটিয়ে দিতে দারুণ ভূমিকা পালন করেন।
প্রথম ইনিংসে ইংল্যান্ডের সফলতম বোলার স্টোকস। ১৪ ওভারের স্পেলে ২৬ রান দিয়ে ৪ উইকেট নেন তিনি। এছাড়া মঈন তিনটি, আদিল রশিদ দুটি এবং গ্যারেথ ব্যাটি নেন একটি উইকেট।
প্রথম ইনিংসে ইংল্যান্ডকে ২৯৩ রানে অলআউট করতে দারুণ ভূমিকা পালন করেন মিরাজ। টেস্ট ক্রিকেটে বাংলাদেশের বিপক্ষে এটাই ইংল্যান্ডের সর্বনিম্ন সংগ্রহ।
ইংল্যান্ডের হয়ে মঈন সর্বোচ্চ ৬৮ রান করেন। এছাড়া বেয়ারস্টো ৫২, জোর রুট ৪০ ও ওকস করেন ৩৬ রান।
বাংলাদেশের হয়ে অভিষিক্ত মিরাজ ৮০ রানে ৬ উইকেট নেন। সাকিব ও তাইজুল নেন দুটি করে উইকেট।
প্রসঙ্গত, চট্টগ্রাম টেস্ট শেষে বাংলাদেশ ও ইংল্যান্ড ঢাকায় ফিরে আসবে। আগামী ২৮ অক্টোবর থেকে সিরিজের দ্বিতীয় ও শেষ টেস্ট মিরপুরের হোম অব ক্রিকেটে শুরু হবে। টেস্ট সিরিজের আগে তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজে ১-২ ব্যবধানে ইংল্যান্ডের কাছে পরাজিত হয় মাশরাফি বিন মুর্তজার দল।

সংক্ষিপ্ত স্কোর- (তৃতীয় দিন শেষে)

ইংল্যান্ড ১ম ইনিংস- ১০৫.৫ ওভারে ২৯৩/১০ (মঈন ৬৮, বেয়ারস্টো ৫২, রুট ৪০, কুক ৪, ওকস ৩৬; মিরাজ ৬/৮০, সাকিব ২/৪৬, তাইজুল ২/৪৭ ও দ্বিতীয় ইনিংস ২২৮/৮ (স্টোকস ৮৫, বেয়ারস্টো ৪৭, ডাকেট ১৫, মঈন ১৪; সাকিব ৫/৭৯, তাইজুল ১/৪০, মিরাজ ১/৫৪, রাব্বি ১/২৪)

বাংলাদেশ ১ম ইনিংস- ৮৬ ওভারে ১০/২৪৮ ( তামিম ৭৮, ইমরুল ২১, মাহমুদউল্লাহ ৩৮, মুশফিক ৪৮, সাকিব ৩১, সাব্বির ১৯; স্টোকস ৪/২৬, মঈন ৩/৭৫, আদিল ২/৫৮ ব্যাটি ১/৫১)



This post has been seen 569 times.

সর্বশেষ শিরোনাম

অনুসন্ধান ক্যালেন্ডার

শনি রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র
 
১০
১১১২১৩১৪১৫১৬১৭
১৮১৯২০২১২২২৩২৪
২৫২৬২৭২৮২৯৩০৩১