লন্ডন অগ্নিকাণ্ডে বাংলাদেশি ৫ সদস্যের পরিবার নিখোঁজ

প্রকাশিত: ৩:১৩ অপরাহ্ণ, জুন ১৫, ২০১৭

লন্ডন অগ্নিকাণ্ডে  বাংলাদেশি ৫ সদস্যের পরিবার নিখোঁজ

নিউ সিলেট ডেস্ক : যুক্তরাজ্যের পশ্চিম লন্ডনের বহুতল ভবন গ্রিনফেল টাওয়ারে মঙ্গলবার রাতের অগ্নিকাণ্ডের পর ২৪ ঘণ্টারও বেশি সময় পেরিয়ে গেলেও খোঁজ মেলেনি সেখানে বসবাসরত পাঁচ সদস্যের এক বাংলাদেশি পরিবারের। ১৯৭৪ সালে নির্মিত ২৪ তলা এই ভবনে দেড়শর মতো আবাসিক ফ্ল্যাট ছিল। ১৭ তলায় ১৪২ নম্বর ফ্ল্যাটে থাকতেন বাংলাদেশের কমরু মিয়া, তার স্ত্রী রাজিয়া বেগম, দুই ছেলে আবদুল হানিফ ও আবদুল হামিদ এবং এক মেয়ে হোসনা বেগম তানিমা।
কমরু মিয়ার ভাতিজা যুক্তরাজ্যেরই চেলসির বাসিন্দা আবদুর রহিম জানান, আগুন লাগার পর রাতে তার চাচাত বোনের সঙ্গে তার টেলিফোনে কথা হয়েছিল। তখন তিনি বাঁচার আকুতি জানাচ্ছিলেন। রাত আড়াইটার দিকে তানিমার (হোসনা বেগম তানিমা) সঙ্গে শেষ কথা হয়। তার আকুতি এখনও আমার কানে ভাসে। সে বলছিল, আমরা সবাই এখন বাথরুমে, আমাদের বের হওয়ার কোনো উপায় নেই, দোয়া করেন আমাদের যেন কষ্টে মৃত্যু না হয়।
আগামী ২৯ জুলাই তানিমার বিয়ের দিন ঠিক ছিল জানিয়ে কান্নাজড়িত কণ্ঠে রহিম বলেন, এ নিয়ে ব্যাপক প্রস্তুতি ছিল আমাদের। বিয়ের পর বাংলাদেশেও তাদের যাওয়ার কথা ছিল। তানিমার হবু বর ব্রিটিশ যুবক লেস্টারও অগ্নিকাণ্ডের খবর পেয়ে রাতে ঘটনাস্থলে ছুটে আসেন বলে জানান রহিম।
তানিমার খালাতো ভাই লন্ডন প্রবাসী আজিজুল হক বলেন, ওর বিয়ের কার্ড বিতরণ করা হচ্ছিল। আমার কাছেও একটি কার্ড আছে। বিয়ের সব কেনাকাটাও প্রায় শেষ। এখানে মোমুন সেন্টারে বিয়ের জন্য হল বুকিং দেওয়া হয়েছে। ২৯ জুলাই বিয়ে।
লন্ডনে যে বহুতল ভবনে আগুন লাগার ঘটনা ঘটেছে, সেখানে থাকেন তার খালা। আগুন লাগার পর থেকেই খালার পুরো পরিবার নিখোঁজ। খালার পরিবারের কারও লাশ উদ্ধার হয়নি বলে তাদের মৃত বলা যাচ্ছে না নিশ্চিতভাবে। কিন্তু তারা কি জীবিত আছেন? এমন সব ভাবনায় অজানা আশঙ্কায় বুক কাঁপছে আজিজুল হকের।
মৌলভীবাজারের কৈয়াছড়া গ্রামের ৯০ বছর বয়সী কমরু মিয়া বছর খানেক আগে সপরিবারে গ্রিনফেল টাওয়ারে উঠেছিলেন, অগ্নিকাণ্ডে পর ভবনটি এখন ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। কমরুর বড় ছেলে আব্দুল হাকিম তার স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে এনফিল্ডে আলাদা বাসায় থাকেন। অন্য দুই ছেলে আব্দুল হামিদ, আব্দুল হানিফ ও মেয়ে তানিমা বাবা-মার সঙ্গে থাকেন। তাদের কারও মোবাইল ফোনেই রাত আড়াইটার পর থেকে আর যোগাযোগ করা যাচ্ছে না বলে রহিম জানান।
রহিম বলেন, রাত সোয়া একটার দিকে তানিমার ফোনে আগুন লাগার খবর পাই। গাড়ি নিয়ে ২০ মিনিটের মধ্যে যাই গ্রিনফেল টাওয়ারের সামনে, তখন সেখানে আগুন জ্বলছিল। হাকিমও ততক্ষণে চলে আসে। এরপর রাত আড়াইটা পর্যন্ত তানিমার সঙ্গে কথা বললেও তারপর থেকে ওই পরিবারের সবার ফোন বন্ধ পাচ্ছেন তিনি।
আজিজুল হক বলেন, মঙ্গলবার রাত তিনটার দিকে ওদের (খালার পরিবার) সঙ্গে সর্বশেষ কথা হয়। ওরা কোরআন শরিফ পড়ছিলেন। বাসার বাথরুমে আশ্রয় নিয়েছিলেন। এরপর আর ফোন করে কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি। কেউ ফোন ধরেনি। হাকিমকে নিয়ে সকাল ৮টা পর্যন্ত ভবনের সামনেই ছিলেন বলে জানান রহিম। পরে দুজনে বিভিন্ন হাসপাতালে গিয়ে খোঁজ নিয়েও স্বজনদের পাননি। পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে চলছেন জানিয়ে রহিম বলেন, তারাও কোনো খবর দিতে পারেনি। বিভিন্ন কমিউনিটি সেন্টারে খোঁজ করেও কোনো তথ্য মেলেনি।
রহিম বলেন, ওই ভবনটিতে আরও দু-একটি বাঙালি পরিবার থাকেন বলে চাচার কাছে শুনেছিলেন তিনি। তবে কারও সম্পর্কে বিস্তারিত কিছু তিনি জানেন না। আবাসিক ওই ভবনের বাসিন্দাদের বেশিরভাগই আরব ও আফ্রিকান।dt/ns/-



This post has been seen 194 times.

সর্বশেষ শিরোনাম

অনুসন্ধান ক্যালেন্ডার

শনি রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮