রিজার্ভ চুরি’ যুক্তরাষ্ট্রকে নিয়ে মামলার চিন্তা বাংলাদেশের

প্রকাশিত: ২:১৯ অপরাহ্ণ, ডিসেম্বর ৮, ২০১৭

রিজার্ভ চুরি’ যুক্তরাষ্ট্রকে নিয়ে মামলার চিন্তা বাংলাদেশের

নিউ সিলেট ডেস্ক : বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির ঘটনায় যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় ব্যাংককে সঙ্গে নিয়ে মামলা করতে চায় বাংলাদেশ ব্যাংক। এই মামলা হবে ফিলিপাইনের যে প্রতিষ্ঠানে অর্থ নিয়ে যাওয়া হয়েছিল সেই রিজাল ব্যাংকের (আরসিবিসি) বিরুদ্ধে।
এই মামলার পরিকল্পনা নিয়ে বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ ও সুইফটের সঙ্গে আলোচনা করেছে। আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যম রয়টার্স এই খবর নিশ্চিত করেছে।
ফিলিপাইনে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূতও এ ব্যাপারে ফিলিপাইন সরকারের কাছ থেকে ইতিবাচক সাড়া পেয়েছেন বলে রয়টার্সকে জানিয়েছেন। তিনি জানান, ফিলিপাইনের পররাষ্ট্র সচিবের সঙ্গে চুরি যাওয়া অর্থ পুনরুদ্ধারের বিষয়ে তাঁর বৈঠক হয়েছে। ওই বৈঠকে স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় জব্দ করা অর্থের বাইরে বাকি অর্থ উদ্ধারের জন্য রিজাল ব্যাংকের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নিতে বলেছেন ফিলিপাইনের পররাষ্ট্রসচিব। সেই পরামর্শ মেনেই মামলার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে বলে জানান রাষ্ট্রদূত।
বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্র জানিয়েছে, ফিলিপাইন সরকারের কাছে এর মধ্যেই পারস্পরিক আইনি সহায়তা অনুরোধ-সংক্রান্ত প্রস্তাব পাঠিয়েছে বাংলাদেশ সরকার।
প্রাথমিক পরিকল্পনা অনুযায়ী, চুরি যাওয়া টাকা উদ্ধারের জন্য আগামী মার্চ-এপ্রিল নাগাদ ওই দেওয়ানি মামলাটি করা হবে নিউ ইয়র্কে। বাংলাদেশ আশা করছে, ফেডারেল রিজার্ভ ও সুইফট কর্তৃপক্ষও সেখানে বাদী হবে।
২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে চুরি যাওয়া টাকা দেশে ফেরত আনতে সরকারের টাস্কফোর্স এ বছরের ৩০ মে উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তাদের নিয়ে বৈঠক করে। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব ইউনুসুর রহমানের সভাপতিত্বে ওই বৈঠকে এসব বিষয়ে আলোচনার পর ছয়টি সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। বৈঠকে বলা হয়, চুরির অর্থ দ্রুত উদ্ধারে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে আইনজীবী নিয়োগে অ্যাটর্নি জেনারেলের কার্যালয় কাজ করবে। এ ছাড়া রিজাল ব্যাংকের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিতে বাংলাদেশ ব্যাংক কাজ করবে। এ ব্যাপারে সহযোগিতা করতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে বলা হয়েছে। এ ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত দেশ হিসেবে দায়ী ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য চলতি মাসে দক্ষিণ কোরিয়ায় হতে যাওয়া ফিন্যান্সিয়াল অ্যাকশন টাস্কফোর্সের (এফএটিএফ) প্ল্যানারি সভায় বাংলাদেশ বন্ধুপ্রতিম বিভিন্ন দেশের কাছে সহযোগিতা চাইবে বলেও জানায় সুত্রটি।
২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারির শুরুতে সুইফট মেসেজিং সিস্টেমের মাধ্যমে ৩৫টি ভুয়া বার্তা পাঠিয়ে যুক্তরষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক অব নিউ ইয়র্কে রক্ষিত বাংলাদেশের এক বিলিয়ন ডলার সরিয়ে ফেলার চেষ্টা হয়। এর মধ্যে পাঁচটি মেসেজে ৮ কোটি ১০ লাখ ডলার যায় ফিলিপাইনের রিজল কমার্সিয়াল ব্যাংকে। আর আরেক আদেশের মাধ্যমে শ্রীলঙ্কায় পাঠানো হয় ২০ লাখ ডলার। শ্রীলঙ্কায় পাঠানো সেই ২০ লাখ ডলার অ্যাকাউন্টে জমা হওয়ার আগেই আটকানো সম্ভব হয়েছিলো। কিন্তু ফিলিপাইনের ব্যাংকে যাওয়া অর্থের বেশিরভাগটাই স্থানীয় মুদ্রায় বদলে বিভিন্ন ক্যাসিনো ঘুরে ধরা ছোয়ার বাইরে চলে যায়। কেন্দ্রীয় ব্যাংক পর্যায় এতবড় সাইবার চুরির ঘটনা পৃথিবীতে নজিরবিহীন। বাংলাদেশ ব্যাংক না জানালেও বাংলাদেশের মানুষ ঘটনাটি জানতে পারে এক মাস পর, ফিলিপাইনের একটি পত্রিকার মাধ্যমে। বিষয়টি চেপে যাওয়ায় ব্যাপক সমালোচনার মুখে গভর্নরের পদ ছাড়তে বাধ্য হন কেন্দ্রীয় ব্যাংক প্রধান আতিউর রহমান; কেন্দ্রীয় ব্যাংকের শীর্ষ পর্যায়ে আনা হয় বড় ধরনের রদবদল। ওই সময়ই কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পক্ষ থেকে রিজার্ভ চুরির ঘটনায় মামলা করা হয়। বাংলাদেশ পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ-সিআইডি গত ২২ মাসেও আদালতে কোনো তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে ব্যর্থ হয়। পুরো বিশ্বে আলোচিত এই সাইবার চুরির পেছনের কাদের হাত ছিলো তা জানা যায়নি এখনও। ঘটনার পর অর্থ মন্ত্রনালয় চুরি যাওয়া অর্থ উদ্ধারে তৎপর হয়। তাদের উদ্যোগে কেন্দ্রীয় ব্যাংক, ফেডেরাল রিজার্ভ এবং সুইফট এর সাথে যোগাযোগ করে চুরি যাওয়া অর্থ ফেরত পাওয়ার পদক্ষেপ নেয়।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ সুত্রে জানা যায়, ইতিমধ্যে ফিলিপাইনের জাংকেট অপারেটর মি. কিমের কাছ থেকে নগদ ১৫ দশমিক ২৫ মিলিয়ন ডলার উদ্ধার করা হয়েছে। এ অর্থ ফিলিপাইনের অ্যান্টি মানি লন্ডারিং কাউন্সিলের কাছে গচ্ছিত রয়েছে।dt/ns/-



This post has been seen 283 times.

সর্বশেষ শিরোনাম

অনুসন্ধান ক্যালেন্ডার

শনি রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র
 
১০
১১১২১৩১৪১৫১৬১৭
১৮১৯২০২১২২২৩২৪
২৫২৬২৭২৮২৯৩০৩১