আঞ্চলিক সমীকরণে নতুন মাত্রা
পাকিস্তানকে ৮৪ হাজার কোটি সাহায্য দেবে সৌদি আরব

প্রকাশিত: ১০:৪৯ পূর্বাহ্ণ, জানুয়ারি ১৪, ২০১৯

<span style='color:#ff0000;font-size:20px;'>আঞ্চলিক সমীকরণে নতুন মাত্রা </span> <br/> পাকিস্তানকে ৮৪ হাজার কোটি সাহায্য দেবে সৌদি আরব

নিউ সিলেট ডেস্ক: পাকিস্তানের ডাকে সাড়া দিয়ে গোয়াদর সমুদ্রবন্দরে বিপুল পরিমাণ অর্থ বিনিয়োগ করে তেল শোধনাগার বানানোর কথা জানিয়েছে সৌদি আরব। এই বিনিয়োগের পরিমাণ দশ বিলিয়ন ডলার, বাংলাদেশী অর্থমূল্যে যা প্রায় ৮৪ হাজার কোটি টাকা। রোববার পাকিস্তানের বালুচিস্তান প্রদেশের গোয়াদর বন্দরে দাঁড়িয়ে এই আর্থিক সাহায্যের কথা ঘোষণা করেন সৌদি আরবের শক্তিমন্ত্রী খালিদ আল ফালি। একই সঙ্গে তিনি জানিয়েছেন, ‘‘পাকিস্তানের আর্থিক উন্নয়নের শরিক হতে চায় সৌদি আরব। সেই জন্যই বানানো হচ্ছে তেল শোধনাগার। পাশাপাশি চীন-পাকিস্তান অর্থনৈতিক করিডরের অংশীদারও হতে চাই আমরা।’’
আগামী ফেব্রুয়ারিতেই পাকিস্তান সফরে আসবেন সৌদির যুবরাজ তথা ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমান। সেখানেই পাকিস্তানের সঙ্গে চুক্তি সই করা হবে বলে জানিয়েছেন সৌদির শক্তি মন্ত্রী। গোয়াদর সমুদ্রবন্দরে তেল শোধনাগার ছাড়া অন্যান্য বেশ কিছু প্রকল্পেও পাকিস্তানকে আর্থিক সাহায্য করা হবে বলে জানিয়েছেন খালিদ আল ফালি।
আগস্টে ক্ষমতায় আসার পর থেকেই দেনার দায়ে জর্জরিত পাকিস্তানকে দেউলিয়া হয়ে যাওয়া থেকে উদ্ধার করতে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের কাছে আর্থিক সাহায্য চাইছেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান। কখনো চীন, কখনো সৌদি আরব, কখনো সংযুক্ত আরব আমিররাত। সবার কাছেই হাত পেতেছেন ইমরান। ঋণ মওকুব করতে আলাপ-আলোচনা চালাচ্ছেন আন্তর্জাতিক অর্থ তহবিলের সঙ্গেও। এই পরিস্থিতিতে সৌদির এই আর্থিক সাহায্যে আপাতত কিছুটা হলেও হাঁফ ছেড়ে বাঁচার সুযোগ পেলেন ইমরান, এমনটাই মনে করছেন আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞরা।
যদিও সৌদির এই আর্থিক সাহায্য এই অঞ্চলে নতুন মাত্রা সৃষ্টি করতে পারে বলে ধারণা বিভিন্ন মহলের। কারণ, চীন-পাকিস্তান অর্থনৈতিক করিডরের একটা প্রান্ত হলো গ্বাদর সমুদ্রবন্দর। এই করিডরের ২০০০ কিলোমিটার দীর্ঘ রাস্তা, রেলপথ এবং বন্দরের মাধ্যমে পশ্চিম চীন যুক্ত হয়ে যাচ্ছে ভারত মহাসাগরের সঙ্গে। পাক- অধিকৃত কাশ্মীর এবং বালুচিস্তানের বুক চিরে এই রাস্তা তৈরি হলে চীনের কাশগড় থেকে সহজেই পৌঁছে যাওয়া যাবে আরব সাগর। সেখান থেকে সহজেই ভারত মহাসাগরের একটা বিস্তীর্ণ এলাকায় প্রভাব বাড়াতে পারবে বেইজিং।
বাণিজ্যিক এবং অর্থনৈতিক উদ্দেশ্যেই বানানো হচ্ছে এই করিডর, চীন-পাকিস্তানের সরকারি বক্তব্য এরকমই। কিন্তু ভিন্ন কথাও বলছে অনেকে। কিছু দিন আগেই একটি খবর ফাঁস করে একটি বহুল প্রচারিত মার্কিন সংবাদ মাধ্যম। সেই রিপোর্টে বলা হয় বাণিজ্য ও পরিকাঠামোর মুখোশের আড়ালে আসলে সামরিক বোঝাপড়া করছে চীন ও পাকিস্তান। এই করিডরের অন্তর্গত বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলোতে যুদ্ধবিমান বানানোর চুক্তিও সেরে ফেলেছে বেইজিং এবং ইসলামাবাদ, এমনই বলা হয়েছিল সেই রিপোর্টে।
গোয়াদর বিমানবন্দরেই একটি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল বানানোর ঘোষিত প্রকল্প আছে চীন ও পাকিস্তানের। এই এলাকায় পণ্য মজুত, পরিবহন এবং উৎপাদনের জন্য জায়গা দেয়া হবে বিভিন্ন চীনা কোম্পানিকে। সেই গোয়াদরেই এই বিপুল পরিমাণ অর্থ বিনিয়োগ করে সৌদি আরবের তৈল শোধনাগার বানানোর সিদ্ধান্ত কীভাবে নিচ্ছে চীন, সেই প্রতিক্রিয়া এখনো পাওয়া যায়নি।
এই প্রসঙ্গে মনে রাখতে হবে, আমেরিকার অন্যতম বন্ধু দেশ হলো সৌদি আরব। তাই পাকিস্তানে নিজেদের প্রকল্পের চৌহদ্দিতে সৌদির এই উপস্থিতি খুব একটা স্বস্তির নাও হতে পারে চীনের কাছে, এমনটাই মনে করছেন কোনো কোনো পররাষ্ট্র বিশেষজ্ঞ। কারণ, পূর্ব চীন দিয়ে অন্য রুটে ভারত মহাসাগর পৌঁছতে হলেও চীনকে মার্কিন বাধার সামনে পড়তে হয় একাধিক আমেরিকাপন্থী দেশ থাকার কারণে। এবার অন্যতম মিত্র দেশ পাকিস্তানেও হাজির হলো সৌদি আরব। যারা পাকিস্তানকে আর্থিক সাহায্য দেয়ার পাশাপাশি চীন-পাকিস্তান অর্থনৈতিক করিডরের অংশীদার হওয়ার দাবিও জানিয়ে দিলো প্রথম দিনেই।



This post has been seen 529 times.

সর্বশেষ শিরোনাম

অনুসন্ধান ক্যালেন্ডার

শনি রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র
 
১০
১১১২১৩১৪১৫১৬১৭
১৮১৯২০২১২২২৩২৪
২৫২৬২৭২৮২৯৩০৩১